নিউজিল্যান্ডের (New Zealand) মাটিতে ইউরোপীয়দের পা পড়ার অন্তত ৪০০ বছর আগে থেকে সেখানে পলিনেসিয়ান জাতির বাস ছিল। সেই দেশের নাম ছিল আওটিয়ারোয়া (Aotearoa)। ঔপনিবেশিকতার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছে সেই ইতিহাস। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে আবার মাওরি উপজাতির সেই ইতিহাস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আর সেই ইতিহাসের সূত্র ধরেই এবার দেশের নাম বদলে ফেলার আবেদন জানালেন মাওরি পার্টির সদস্যরা। গতকালই প্রধানমন্ত্রী আরডার্নের কাছে এই বিষয়ে দাবিপত্র পেশ করেছেন তাঁরা।
ষোড়শ শতকে ডাচ অভিযাত্রীদের হাত ধরে বর্তমান নিউজিল্যান্ডে ইউরোপীয়দের আনাগোনা শুরু হয়। নেদারল্যান্ডসের শহর জিল্যান্ডের নামের অনুকরণের দেশের নাম রাখা হয় নিউজিল্যান্ড। তবে এর আগেও যে সেই দেশের মানুষ নেহাৎ অসভ্য ছিলেন না, এবং তাঁদের দেশের যে একটা নামও ছিল – সে-কথা মানতে চান না অনেকেই। সেই ইতিহাসকে এবার জোরের সঙ্গে হাজির করতেই দেশের নাম পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করছেন মাওরি উপজাতির নেতারা।
ইতিমধ্যে অবশ্য নানা ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের পরিবর্তে আওটিয়ারোয়া নামটির ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু সরকারি কাগজপত্রের পাশাপাশি সাহিত্যে এই নামটির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। আওটিয়ারোয়া কথার অর্থ ‘লম্বা সাদা মেঘের দেশ’। নামটির মধ্যেই যে একটা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, সে-কথা স্বীকার করে নেন সকলেই। তবে এর পরেও নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলছেন দক্ষিণপন্থী নেতারা। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন পিটার তো এই প্রস্তাবকে রীতিমতো হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তাঁর মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন দেশের ঐতিহাসিকরা। পিটারের মতে, বিশ শতকের আগে আওটিয়ারোয়া নামটির সঙ্গে কারোর পরিচয়ই ছিল না। অথচ ঐতিহাসিকরা নানা তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছেন উনিশ শতকের শুরু থেকেই নানা নথিতে নামটি পাওয়া যায়। তার আগেও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল এই নাম।
জাকিন্ডা আরডার্ন এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানালেও তিনি বলেছেন দেশের নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বেশ জটিল। তাই তাতে সময় লাগবেই। অন্যদিকে মাওরি পার্টির নেতারা আবেদন জানিয়েছেন, দেশের নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির পুরনো মাওরি ভাষার নাম ফিরিয়ে আনা হোক। সেইসঙ্গে বর্তমানে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা মাওরি ভাষার সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হোক। এই বিষয়ে নিউজিল্যান্ড সরকার খুব তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন আরডার্ন।
Powered by Froala Editor