‘যে-কোনো প্রশ্ন করাকেই বন্ধ করতে চায় রাজনৈতিক দলগুলি’ – বলছেন সিএটি-তে প্রথম স্থানাধিকারী দেবর্ষি

এই মুহূর্তে সমস্ত খবরের অন্যতম চর্চার বিষয় তিনি। কমন অ্যাডমিশন টেস্ট বা সিএটি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন যাদবপুরের ছাত্র দেবর্ষি চন্দ। অবশ্য তাঁর অন্য একটি দিকও আছে। হোক কলরব থেকে নাগরিকত্ব আইন আন্দোলন— সমস্ত জায়গায় প্রতিবাদের অন্যতম মুখ তিনি। দেবর্ষির সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এল সেসবই...

প্রথমেই অভিনন্দন তোমা এই সাফল্যের জন্য…

হ্যাঁ, অনেক ধন্যবাদ।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন নেতারা বলেছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার থেকে রাজনীতি বেশি হয়।’ তুমি নিজেও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছ। তারপর ক্যাট পরীক্ষায় এই ফলাফল— ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তোমার বক্তব্য কী?

যারা প্রশ্ন করে, তাদের শাসক বা ক্ষমতাবানরা সবসময়ই আক্রমণ করে এসেছে। এটা আমরা সবসময়ই দেখেছি। কখনও এই মন্তব্য দিয়ে আক্রমণ করে, কখনও জামিয়া, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ভেতরে ঢুকে আক্রমণ। আজ থেকে নয়, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। পরবর্তীকালে যা দেখা গেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও। তাঁদের লক্ষ্যই যেনতেন-প্রকারেণ প্রশ্ন করাকে বন্ধ করা। কাজেই নেতাদের এই বক্তব্য নিয়ে বেশি কিছু না বলাটাই শ্রেয়।

এনআরসি-সিএএ নিয়ে প্রতিবাদে তুমিও নেমেছিলে। তোমার কাছে এর কারণ কী ছিল?

মূলত দুটো কারণ। যে দেশটাকে আমরা চিনে এসেছি রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের দেশ হিসেবে, তার স্পিরিটের সঙ্গে কোনোভাবেই এনআরসি বা সিএএ মানানসই নয়। এবং এর জন্য যে বিপুল পরিমাণ লোকের নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে, জমির অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে, সেটা কখনই একটি গণতান্ত্রিক দেশে করা যায় না। তাঁরাই তো ভোট দিয়ে নেতাদের গদিতে এনেছেন।

দ্বিতীয়ত, আমার মনে হয় এটি একটি ফ্যাসিস্ট আইন। এছাড়াও, যখনই লোকেরা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিরোধিতা করছে, তখন সেটাকে গায়ের জোরে দমন করা হচ্ছে। সেটা তো গণতন্ত্রের ছবি নয়। আলিগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ— সর্বত্র দেখা গেছে। আর উত্তরপ্রদেশে তো পুলিশ কিছু বাচ্চাকে থানায় তুলে নিয়ে রীতিমত ধর্ষণ করেছে! এটা কি কাম্য? এভাবে কি সমস্ত বিরোধী আওয়াজকে থামিয়ে দেওয়া যায়? এর জন্যই প্রতিবাদ করছি আমরা।

বেশ। এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। তোমার গ্র্যাজুয়েশন ছিল ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। তারপর ক্যাট দিয়েছ। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এমবিএ করবে না তুমি। ইকোনমিক্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা তোমার…

হ্যাঁ। দেশের এই মুহূর্তে যে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, সেখানে দাঁড়িয়ে রুরাল ডেভেলপমেন্ট এবং সেই সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে অ্যাকাডেমিকালি ও সোশ্যালি কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। সেখান থেকেই ইকোনমিক্স নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছা আর কি…

অর্থনীতি নিয়ে কোথায় পড়তে চাও?

আপাতত আইআইএম-এ, তবে ফাইনালি এখনও কিছু ঠিক করিনি…

পড়াশোনার বাইরে তোমার পছন্দ কী?

অবশ্যই পলিটিকাল এনগেজমেন্ট তো থাকবেই। এর বাইরে ফুটবল আমার খুবই প্রিয়… আমি নিজেও খেলি। ফলোও করি নিয়মিত।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং তো সম্পূর্ণ আলাদা একটা জগত, তার পড়াশোনা আলাদা। সেখান থেকে অর্থনীতির দিকে আসাটা তোমার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জিং?

আসলে যাদবপুরে বই-খাতা-সিলেবাসের বাইরেও একটা পড়াশোনার জায়গা থাকে। সেখানে নিজের মতো করে সামাজিক এবং রাজনৈতিক মতামত গড়ে তোলারও স্পেসটা পাওয়া যায়। সেই সামাজিক সমস্যাগুলো দেখতে গিয়ে, ভাবতে গিয়ে বা বলতে গিয়েই অর্থনীতির প্রতি একটা ইন্টারেস্ট তৈরি হয়। আর বিজ্ঞান তো সবকিছুর সঙ্গেই জড়িত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি এটাকে খুব আলাদা বিষয় বলে দেখি না।

More From Author See More