সময়ের সারণি ধরে কিছুটা পিছিয়ে গেলেই আমরা সাক্ষী থাকব এক আতঙ্কিত পরিবেশের। সময়টা মার্চ-এপ্রিল মাস। ভারতে একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শুধুই যে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছিল, তাই নয়। আতঙ্ক গ্রাস করেছিল মানুষের মনকেও। ঘর থেকে বাইরে বেরোতে গিয়েও দুবার ভাবতেন সকলে। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, সরকারের তরফ থেকেও শিথিল করা হয়েছে বিধিনিষেধ। মানুষও ক্রমশ আতঙ্ককে জয় করেছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসকে জয় করতে এখনও বহুদূরে ভারত। আর এর মধ্যেই গতকাল দেশে মৃত্যুসংখ্যাও ১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেল। সব মিলিয়ে রবিবার সকাল পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১ লক্ষ ২ হাজার।
করোনা রোগীর মৃত্যুর দৌড়ে ১ লক্ষের গণ্ডি পার করা তৃতীয় দেশ ভারত। অথচ সাম্প্রতিক সময়ের দিকে তাকালে যেন খানিকটা অদ্ভুতই লাগে। অর্থনীতি সামাল দিতে ক্রমশ খুলে দেওয়া হচ্ছে কর্মক্ষেত্র। স্কুল-কলেজ খুলতে শুরু করে দিয়েছে। বেশিরভাগ গণ-পরিবহণ ব্যবস্থাও চালু হয়ে গিয়েছে। হয়তো এই সবই ভীষণ প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু সেইসঙ্গে উপযুক্ত সচেতনতা বজায় রাখাও প্রয়োজন। সেটা যেন কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতেই এদেশের সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়। এর মধ্যে কৃষিবিল বিরোধী আন্দোলন এবং হাথরাস ধর্ষণ মামলা তো রয়েছেই। আর তার পাশাপাশি উঠে এসেছে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্য এবং বলিউডের ড্রাগ চক্রের মামলা। কোনো বিষয়ই হয়তো খুব গুরুত্বহীন নয়। কিন্তু এইসব ঘটনার ঘনঘটায় কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে করোনা সতর্কতা। মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার অবশ্য খানিকটা অভ্যাসের মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে আর সেভাবে সচেতন থাকছেন না কেউই। রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যা কম হলেও ভিড়ে ঠাসা বাস বা বেশি যাত্রী নিয়ে ছুটে যাওয়া অটো-রিক্সা আবারও ঠিকই চোখে পড়ছে।
সম্প্রতি করোনা বিষয়ক সংবাদেও যেন বারবার ইতিবাচক দিকগুলিই উঠে আসছে। মৃত্যুহার কমছে, অনাক্রম্যতা বাড়ছে; এসব খবরই ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যাও। দেশজুড়ে দৈনিক ২০ হাজার সংক্রমণ নিয়ে যে দুঃশ্চিন্তার নমুনা দেখা গিয়েছিল, দৈনিক সংক্রমণ ১ লক্ষ ছুঁতে চলায় আর তেমনটা চোখে পড়ছে না। এর মধ্যে অবশ্য কেরালার বেশ কিছু অঞ্চলে লাগু হয়েছে ১৪৪ ধারা। আসাম, কাশ্মীর, মণিপুর সহ পশ্চিমবঙ্গেও এখনও আংশিক লকডাউন লাগু আছে। মুম্বাই বা দিল্লি শহর এখনও আতঙ্কে দিন গুনছে। অথচ এর মধ্যেই রেল চলাচল শুরু করার পরিকল্পনাও চলছে। তবে এই দীর্ঘ মহামারীর সময়ে মানুষ যেন ক্রমশ বিরক্ত হয়ে উঠছেন। এতদিন পরেও কোনো উপযুক্ত ভ্যাকসিন দূরের কথা, কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থাও এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ আরও হতাশ হয়ে ওঠার বদলে হয়তো পরিস্থিতি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এভাবেই হয়তো একধরনের মানসিক তৃপ্তি খোঁজার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাস্তবকে অগ্রাহ্য করে কি পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব? প্রশ্ন রইল পাঠকের কাছেই।
Powered by Froala Editor