কাজকর্ম ছেড়ে চলে এসেছিলেন বন্ধুদের কাছে। নিজের শহর, কাছের মানুষদের ছেড়ে চলে এসেছিলেন সম্পূর্ণ অন্য জগতে। হোক আলাদা পরিবেশ, এখানে তো তাঁর বন্ধুরা আছে! সবাই মিলে একসঙ্গে থাকবেন, যাকে বলে নিশ্চিন্ত শান্ত একটি জীবন। সেই কাজটাই করেছেন ডেভ স্নেইডার। আর তাঁর বন্ধুদের পরিচয়? সিংহ, চিতা, হায়েনা, ক্যাঙ্গারু এবং আরও অনেকে…
সব ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে বন্য জন্তুদের সঙ্গে জীবন কাটাতে বললে আপনি কী করবেন? নিশ্চয়ই খুব বেশি রোমাঞ্চপ্রিয় না হলে এমনটা করবেন না। ডেভ স্নেইডার সেই অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যেই বেঁচে থাকতে চান। তাও আবার আফ্রিকার মতো জায়গায়! শুরুটা হয়েছিল বেশ কিছু বছর আগে। সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী ডেভের পড়াশোনার বিষয় ছিল ফিনান্স। মাত্র ২১ বছর বয়সেই নিজের একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানি শুরু করেন। অর্থনীতি, ব্যাঙ্কিং সেক্টর, শেয়ার বাজার, ফিনান্স মার্কেট— এসব নিয়েই কেটে যাচ্ছিল জীবন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্রমশ বাড়ছিল অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। প্রকৃতি, পশুপাখির প্রতিও ডেভের অগাধ ভালোবাসা। বন্য প্রাণের ওপর এত অত্যাচার তিনি সহ্য করতে পারতেন না।
একসময় সাময়িক কাজের জন্য চলে গেলেন আফ্রিকা। সেখান থেকেই জীবনের মোড় ঘুরে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকায় জঙ্গলের মধ্যে একটি জায়গা ঠিক করে সেখানে স্যানচুয়ারি এবং রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা করেন। নিজের হাতে সমস্ত প্ল্যান সাজিয়ে তৈরি করেন সাধের ‘হাকুনা মিপাকা’ স্যানচুয়ারি। তারপর ২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডের সমস্ত পাট চুকিয়ে, চাকরি ছেড়ে চলে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ তিন বছর হয়ে গেল সেখানেই থাকেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে তাঁর একান্ত আপন প্রাণীরা। যাদের দেখে আমরা ভয়ই পেয়ে থাকি, তারাই হয়ে উঠেছে ডেভ স্নেইডারের সঙ্গী।
কখনও ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে পড়ছে, কখনও আদর করে কোলে মাথা রাখছে। যেন নিজেদেরই একজন! আফ্রিকার বন্য প্রাণীদের সঙ্গে এভাবেই মিলে যাচ্ছেন ডেভ। তাঁর সেই অ্যাডভেঞ্চারের ছবিই রীতিমতো ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। সবাই অবাক হয়ে দেখেন তাঁর কেরামতি। কিন্তু এগুলোকে কোনো ‘কেরামতি’ মানতে রাজি নন স্বয়ং ডেভ। বরং তিনি জোর দিচ্ছেন মনস্তত্ত্বের ওপর। ওদের ওপর অত্যাচার না করে ওদের মতো করে মিশলে এই প্রাণীরাও ঘরের একজন হয়ে যায়। ঠিক সেটাই করছেন তিনি। অবশ্য এমন কাজ করতে গিয়ে বিতর্কেও পড়েছেন একবার। গত মে মাসেই একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সিংহের পাশে শুয়ে আছেন ডেভ স্নেইডার। তখন তাঁর মাথায় সিংহটির ধারালো নখের আঘাত লাগে। তারপরই দেখা যায়, ডেভ হাত মুঠো করে মারার ভঙ্গি করছেন।
আরও পড়ুন
শিকারের জন্যে হাজার হাজার সিংহ পালিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়, সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
কিন্তু একে আমল দিতে একেবারেই রাজি নন তিনি। তাঁর কথায়, আমরা এই পশুগুলোকে চিনতেই পারিনি ঠিক করে। ওরা নিজেদের মধ্যেও এরকম মারামারি, খুনসুটি করে। ঠিক ওই জিনিসটাই ডেভের সঙ্গেও করেছিল সিংহটি। বারবার কোনোরকম সুরক্ষা ছাড়াই ওদের কাছে চলে যান তিনি। নিজের শরীর দিয়েই মোকাবিলা করেন। আঘাত আসে বারবার; চিহ্নও ছড়িয়ে আছে শরীরে। কিন্তু কেউই পরস্পরকে ছাড়া থাকতে পারে না। আর নিজের এমন কাজের মাধ্যমেই গোটা বিশ্বকে বন্য প্রাণ রক্ষার বার্তা দিতে চান ডেভ স্নেইডার।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কুস্তি লড়তেন বাঘের সঙ্গে, কবর ফুঁড়ে উঠে এসেছিলেন বাংলার সুশীলা সুন্দরী