৫০০ বছর আগে ভিঞ্চির যুদ্ধাস্ত্রের নকশা, বিস্ময় জাগায় আজও

/১২

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির (Leonardo Da Vinci) প্রসঙ্গ উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মোনালিসা কিংবা দ্য লাস্ট সাপারের দৃশ্য। তবে চিত্রশিল্পী হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত হলেও স্থাপত্য, ভাস্কর্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অ্যানাটমি— প্রতিটি ক্ষেত্রকেই ছুঁয়ে গেছেন তিনি। এবং আশ্চর্যের বিষয় হল, শিল্পের থেকে প্রযুক্তি তৈরিতেই বেশি সময় ব্যয় করতেন রেনেসাঁর অন্যতম প্রাণপুরুষ। তৈরি করেছিলেন ভয়ঙ্কর সব যুদ্ধাস্ত্রের নকশা। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক লিওনার্দো দা ভিঞ্চির সেই সব আশ্চর্য যুদ্ধাস্ত্র (Weapons)।

/১২

ট্রিপল ব্যারেল গান— কাঠের ফ্রেমের ওপর বসানো লোহার তিনটি কামান। একবার অগ্নিসংযোগ করলেই ক্রমানুসারে গর্জে উঠবে তারা। তবে পর পর তিনটি কামানে গুলিতে গরম হয়ে বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা তো রয়েছেই। তাই নির্দিষ্ট সময় পর কামানের ব্যারেল বদল করার ব্যবস্থাও করেন লিওনার্দো। বিশ শতকে ক্রোয়েশিয়ার একটি দুর্গে মেলে এই কামানের ধ্বংসাবশেষ। ২০১১ সালে গবেষকরা নিশ্চিত করেন এটির নির্মাতা আসলে ভিঞ্চিই। তুর্কিদের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল লিওনার্দোর এই আবিষ্কার।

/১২

ব্রিচ-লোডিং ক্যানন— সে-সময় কামানে গোলা ভরতে হত ব্যারেলের মুখ দিয়েই। তারপর অগ্নিসংযোগ করতে হতে ব্যারেলের পিছন দিক থেকে। স্বাভাবিকভাবেই বেশি সময় লাগত তাতে। সমস্যার সমাধানে ব্রিচ-লোডিং ক্যাননের নকশা তৈরি করেন ভিঞ্চি। কামানের নলের পিছন দিকে গোলা ঢুকিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হত ধাতব ঢাকনা দিয়ে। এই নকশাও বাস্তবায়িত হয়েছিল বলেই ধারণা গবেষকদের।

/১২

ওয়াটার জ্যাকেট— ক্রমাগত গোলাবর্ষণের কারণে গরম হয়ে ওঠে কামান বা বন্দুকের নল। উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় অনেকক্ষেত্রে বিস্ফোরণও ঘটে ব্যারেলের মধ্যে। তাই ব্যারেল ঠান্ডা করতে ওয়াটার কুলিং-এর নকশা তৈরি করেছিলেন লিওনার্দো। নাম ছিল ওয়াটার জ্যাকেট। ব্রিচ-লোডিং ক্যাননেই এই প্রযুক্তি লাগানোর পরিকল্পনা থাকলেও, সেই কাজ শেষ করে উঠতে পারেননি তিনি। এর প্রায় সাড়ে চারশো বছর পর এই প্রযুক্তির বাস্তবের রূপ পেতে দেখা গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।

/১২

অরগ্যান অফ ডেথ—এই যন্ত্রটি অনেকটা ট্রিপল ব্যারেল গানের মতোই। তবে ৩টির বদলে অরগ্যানে যুক্ত থাকত ৩৩টি ব্যারেল। ত্রিভুজাকার প্রিজমের ওপর তাদের সাজানো হত। প্রতি পৃষ্ঠে রাখা হত ১১টি করে ব্যারেল। অন্যদিকে নির্দিষ্ট অক্ষের চারদিকে ঘুরতে পারত প্রিজমটিও। ফলে, একবার সম্পূর্ণভাবে গোলা ভরা হলে, শত্রুপক্ষের দিকে ৩ বার ১১টি করে গোলাবর্ষণ করত এই যন্ত্র। অবশ্য এই যন্ত্রের নকশা তৈরি করলেও তাকে বাস্তবের রূপ দেননি লিওনার্দো।

/১২

জায়েন্ট ক্রসবো— পঞ্চদশ শতকে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শুরু হলেও, তা কেবলমাত্র কামানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে কামান যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ হওয়ায়, তার বিকল্প হিসাবে দৈত্যাকার তীরধনুকের নকশা করেন ভিঞ্চি। ২৫ মিটার চওড়া ও ৬ চাকা বিশিষ্ট এই যান থেকে একবারে অসংখ্য তীরনিক্ষেপ করা যেত। এবং আশ্চর্যের বিষয়, একজন সৈন্যই চালাতে পারতেন এই যন্ত্র। প্রাথমিকভাবে এই যন্ত্র ব্যর্থ হলে, জায়েন্ট ক্রসবোর নতুন ডিজাইন তৈরি করেন ভিঞ্চি। তবে অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল সেই কাজ।

/১২

পোর্টেবল ব্রিজ— কথাটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত আমরা। পাহাড়ি অঞ্চলে হঠাৎ ধ্বস নামলে জরুরি তৎপরতায় পর্যটক বা আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করতে এই ধরনের ব্রিজ ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। যা ভাঁজ করে রাখা যায়, আবার সহজে বহনযোগ্যও। আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে এই ধরনের ব্রিজের নকশা তৈরি করেন লিওনার্দো। তুর্কিদের সঙ্গে যুদ্ধে তা ব্যবহৃতও হয়েছিল ইতালিতে।

/১২

ট্যাঙ্ক— আজকে ট্যাঙ্ক বলতে আমরা যা বুঝি, তার থেকে বেশ আলাদা ছিল লিওনার্দোর এই যুদ্ধযান। আকার অনেকটা ইউএফও-র মতোই। শঙ্কু আকৃতির ধাতব আবরণে ঢাকা এই যন্ত্র যেমন শত্রুর গোলা থেকে রক্ষা করত অভ্যন্তরে থাকে সেনানীকে, তেমনই এই যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকত হালকা ওজনের একাধিক কামান। যে-কোনো দিকেই অনায়াসে আক্রমণ চালাতে পারত এই ট্যাঙ্ক। চাকার ৮ জন যাত্রীবাহী এই যান চলত ক্র্যাঙ্ক ও গিয়ারের মাধ্যমে। গবেষদের অনুমানু এই যন্ত্রের প্রোটোটাইপ তৈরি করলেও, তা ধ্বংস করে ফেলেন লিওনার্দো।

/১২

সিথেড চ্যারিয়ট— লিওনার্দোর নকশা করা অন্যতম ঘাতক ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধাস্ত্রদের মধ্যে অন্যতম এই রথ। সাধারণ ঘোড়ায় টানা গাড়ির সঙ্গেই গিয়ারের সাহায্যে ঘূর্ণায়মাণ ব্লেড যুক্ত করেছিলেন লিওনার্দো। গোড়ার গাড়ির চাকা ঘুরলেই আবর্তিত হত সামনের এই ব্লেড। রোমান এবং পার্সিয়ান যুদ্ধের সময় এই রথের প্রোটোটাইপ ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আর এই যন্ত্র নিয়ে কাজ করেননি লিওনার্দো।

১০/১২

ড্রাইভারলেস ভেহিকল— আজকের সময়ে দাঁড়িয়েও চালকহীন গাড়ি সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতোই। সেখানে পঞ্চদশ শতকেই এমন গাড়ির নকশা নির্মাণ করেন ভিঞ্চি। প্রাথমিকভাবে ঐতিহাসিকরা ভেবেছিলেন তাঁর এই নকশা ব্যর্থ হয়েছিল। তবে বিশ শতকে একদল বিজ্ঞানী লিওনার্দোর নকশা দেখেই এই যন্ত্র বানিয়ে অবাক হয়ে যান। হ্যাঁ, সম্পূর্ণ কার্যকর ছিল তাঁর এই নকশা। তবে যাতায়াত নয়, বরং বিস্ফোরক ভরে এই যান শত্রুশিবিরে পাঠানোর জন্যই নকশা বানিয়েছিলেন লিওনার্দো। ব্যাটারির বদলে স্প্রিং-এর সাহায্যে চলত এই যান।

১১/১২

দ্য এরিয়াল স্ক্রু— লিওনার্দোর করা ডিজাইনের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এই যন্ত্রটি। আধুনিক যুগের হেলিকপ্টারের পূর্বসূরি এই এরিয়াল স্ক্রু। ট্যাঙ্ক কিংবা কামানের ওপর আকাশ থেকে আক্রমণ করার জন্যই এই নকশা নির্মাণ করেন তিনি। তবে তা বাস্তবের রূপ পায়নি। ভিঞ্চির বিশ্বাস ছিল একদিন আকাশে উড়বে মানুষ। তিনি তৈরি করতে না পারলেও, উত্তরসূরিরা আকাশে ওড়াবেন এই যন্ত্রকে।

১২/১২

সাবমেরিন— হ্যাঁ, ডুবজাহাজেরও নকশা তৈরি করেছিলেন লিওনার্দো। তবে বালাস্টিক ট্যাঙ্ক নয়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গভীরতা বাড়ানো কমানোর জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন বড়ো বড়ো পাথর। যা এই জাহাজের ভেতর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যেত। তাছাড়া এই জাহাজের ভেতর থেকে বাইরের দৃশ্য দেখার জন্য পেরিস্কোপও ব্যবহার করেন লিওনার্দো। তবে এই যন্ত্র আদৌ তিনি বানিয়েছিলেন কিনা, তা বলা মুশকিল…

Powered by Froala Editor

More From Author See More