তিস্তার মরা খাতে ফিরল প্রাণ, ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত বরেন্দ্রভূমিতে

পূর্বপুরুষদের মুখে নদীর গল্প শুনেছেন অনেকেই। তাঁরাও শুনেছিলেন তাঁদের পূর্বপুরুষদের কাছে। সেই নদী এতদিন চোখে দেখেননি কেউই। তবে প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় অদৃশ্য থাকার পর আবারও ফিরে এসেছে মরা তিস্তা এবং ঘিরনই নদী। নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে হাঁস। মাঝিরা নৌকো নিয়ে নেমে পড়ছেন মাছ ধরতে। সত্যিই এক অভিনব দৃশ্য বাংলাদেশের বরেন্দ্রভূমিতে। হারিয়ে যাওয়া নদীকে বাঁচিয়ে তোলা তো সহজ কাজ নয়। আর সেই প্রায় অসম্ভব ঘটনাকেই সম্ভব করে তুলেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন পর্ষদ। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টার ফলে আবারও বাঁচিয়ে তোলা গিয়েছে দুই হারানো নদীকে।

১৭৭৬ সালে তৈরি রেনেলের মানচিত্রে দেখা যায় তিস্তার একটি শাখানদীর উল্লেখ রয়েছে। নদীটি জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণাংশ থেকে প্রবাহিত হয়ে বর্তমান নীলফামারীর ডোমার উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর রংপুরের তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ হয়ে মিঠাপুকুরের করতোয়া নদীতে মিশে যায়। যা মরা তিস্তা নদী নামে পরিচিতি পায়। অন্যদিকে এই বহুশ্রুত করতোয়া নদী পরে দিনাজপুরে সোনারবন্ধ বা সোনারবান নামের আরেকটি নদীর সঙ্গে মিলে ঘিরনই নাম নেয়। অনুমান করা হয় ১৭৮৭ সালে একসঙ্গে বন্যা ও ভূমিকম্পের ফলেই তিস্তা নদীর গতিপথ বদলে যায়। করতোয়া নদীটি খালের মতো পড়ে থাকলেও মরা তিস্তা এবং ঘিরনই নদীতে জল বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। নদীর খালে কেউ চাষ-আবাদ শুরু করেছিলেন। কেউ বাড়ি বানিয়ে তুলেছিলেন। কেউ কেউ আবার জানতেনই না কোথায় সেই নদী ছিল।

সব মিলিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন পর্ষদের কর্তাদের বেশ সমস্যার মধ্যেই পড়তে হয়। একে তো বহু পুরনো মানচিত্র থেকে নির্দেশ খুঁজে খুঁজে নদীর অববাহিকার সন্ধান পেতে হয়েছে। তারপর অনেক সময়েই সেখানে বাড়ি বানিয়ে থাকা মানুষরা উঠে যেতে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের সবাইকে বোঝাতে হয়েছে নদীর প্রয়োজনীয়তা। অবশেষে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মাধ্যমেই প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে নদীতে। এরপর অবশ্য প্রতি বছর বর্ষায় নিজে থেকেই জলে ভরে উঠবে নদী। ইতিমধ্যে মাছ চাষ শুরু হয়ে গিয়েছে নদীতে। আশেপাশের কৃষিজমিতে সেচের কাজও চলছে। আর সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলতে নদীর ধারে গাছ লাগিয়ে বেশ কয়েকটি জঙ্গলও তৈরি করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেন ইতিহাসকেই সামনে হাজির করল বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন পর্ষদ।

Powered by Froala Editor

Latest News See More