বাড়ির নিচ থেকে আচমকাই যদি বেরিয়ে আসে কিছু নরকঙ্কাল, মাথার খুলি; কেমন বোধ হবে? নিশ্চয়ই খুব সুখকর অভিজ্ঞতা হবে না! প্রাচীন স্ক্যানডিনেভিয়া অঞ্চলে এমনই ঘটনার নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন ঐতিহাসিকরা। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, প্রাচীন ভাইকিংরা নিজেদের ঘরের মধ্যেই দেহাংশ পুঁতে রাখত!
স্ক্যানডিনেভিয়ার প্রাচীন ইতিহাস এমনিই নানা রহস্যে ভরা। বিশেষ করে ভাইকিংদের ইতিহাস নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা করছেন নানা ঐতিহাসিক। মূলত যুদ্ধবাজ এই জাতির জীবনযাপন, বৈচিত্র্য ও তাদের নিয়ে তৈরি হওয়া নানা গল্প-মিথের মধ্যে দিয়েই এই অনুসন্ধান এগিয়ে যাচ্ছিল। সেই গবেষণাতেই উঠে এল এমন তথ্য। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ঘরের মধ্যে দেহাংশ পুঁতে রাখার রেওয়াজের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে, শিশুদের ক্ষেত্রে এই জিনিসটি করা হত।
গ্রেটার স্ক্যানডিনেভিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গবেষকদের হাতে এসেছে। তার মধ্যে ভাইকিংদের সময়ের অনেক নিদর্শনই রয়েছে। উল্লেখ করার মতো বিষয়, এই নিদর্শনের মধ্যে অন্তত ৪০টি খুলির টুকরো পাওয়া গেছে। এখান থেকে পরীক্ষা করে ভাইকিংরা যে কতটা যুদ্ধপ্রিয় জাতি ছিল, তার দেখা গেছে। বেশিরভাগ খুলিই ভাঙা, তবে সেটা প্রাকৃতিক কারণে নয়। ওই আঘাতের জন্যই মানুষটি মারা গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, প্রতিটা খুলিই বসবাসের জায়গার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কখনও বাড়ির কোনো একটা ঘরের মেঝের ভেতর, কখনও কুয়োর ভেতর; আবার কখনও ফার্ম হাউজের ভেতর। এভাবেই মৃতের দেহাংশ নিজেদের মধ্যেই রাখত ভাইকিং গোষ্ঠী।
কিন্তু কেন এরকম রীতি ছিল? বিশেষ করে বাচ্চাদের দেহাংশ কেন রাখা হত? এখানেই ঐতিহাসিকেরা ভাইকিংদের প্রাচীন আচারগুলোর দিকে একবার চোখ ফেরাতে বলছেন। বর্তমান সময় মারা যাওয়ার পরও নিজের পরিজনদের দেহ বাড়ির ভেতরেই রেখে দেওয়ার বেশ কিছু ঘটনা সামনে এসেছে। ভাইকিংদের ক্ষেত্রেও কতকটা সেইরকম ছিল। তবে শেষকৃত্য করার পরই বাকি দেহাংশ নিজেদের কাছে রাখত তাঁরা। এতে নাকি মৃত ব্যক্তির ‘এসেন্স’, তাঁর উপস্থিতি সবসময় বাকিদের সঙ্গে থাকে। তাঁদের মতে, শারীরিকভাবে, জৈবিকভাবে মৃত্যু ঘটে বটে; কিন্তু সেটাই সব না। অনেকটা মিশরীয়দের মৃত্যু দর্শন উঠে আসে এখানে। ভাইকিংদের সম্পর্কে অনুসন্ধান এখানেই শেষ নয়। ঐতিহাসিকরা আরও গবেষণা করছেন। বলা যায় না, আবারও যদি নতুন কোনো তথ্য উঠে আসে!
Powered by Froala Editor