সামান্য জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা। তাছাড়া তেমন কোনো গুরুতর সমস্যাই নেই রোগীর শরীরে। তারপর হঠাৎ করেই অবস্থার অবনতি। কখনও কখনও পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে প্রাণ-সংশয়ের দিকেও। সম্প্রতি, অনেকক্ষেত্রেই চোখে পড়ছে এমন ঘটনা। আর সেটা ঘটছে সংক্রমণ-পরবর্তী ৫ থেকে ১০ দিন সময়ের মধ্যে। ফলত, এই পর্যায়টাকেই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
পরিসংখ্যান বলছে, কোভিড আক্রান্তদের ৮৭-৯০ শতাংশই সেরে উঠছে মৃদু উপসর্গের মধ্যেই। বাকি দশ শতাংশ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আকস্মিকভাবেই জটিল হয়ে উঠছে। একমাত্র তাঁদের ক্ষেত্রেই বেড়ে যাচ্ছে মৃত্যুর সম্ভাবনা। কিন্তু এই হঠাৎ অবনতির কারণ কী?
“কোভিড অসুখটাকে তিনটি পর্যায় ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। যার প্রথমটা হল ভাইরাল রিঅ্যাকশন ফেজ। এই সময়ে করোনাভাইরাস বংশবিস্তার করে আমাদের শরীরে। ফলে জ্বর, কাশি, হাতে-পায়ে ব্যথার মতো উপসর্গগুলো দেখা যায়। পরবর্তী পর্যায়টিকে বলা হয় ইউমিন সিস্টেম রিঅ্যাকশন ফেজ। এই পর্যায়ে দেহের স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। যার ফলে তৈরি হয় একটি সাইটোকাইন স্টর্ম। আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ওভার-স্টিমুলেটেড হয়ে যাওয়ার ফলে তা ক্ষতি করে নিজের শরীরেরই। ফুসফুস, হৃদযন্ত্র-সহ শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়। দেহের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে”, জানালেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডঃ সৌমিতা পাল।
কোভিডের এই দ্বিতীয় পর্যায়টিই স্থায়ী হয় সংক্রমণের পরবর্তী ৫-১০ দিনের মধ্যে। যে কারণে এই পর্যায়টিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আক্রান্তদের কাছে। অন্যথা মাল্টি-অরগ্যান ফেলইয়োরের দিকে চলে যায় রোগী। যা কোভিডের তৃতীয় বা শেষ পর্যায়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, তবে কি এই পর্যায়ে গেলে রোগীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভবই নয়?
আরও পড়ুন
‘আইভারমেকটিন’ ম্যাজিক ড্রাগ নয়, ডেকে আনতে পারে বিপদও; জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা
বিষদে এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন ডঃ সৌমিতা পাল, “এই ফেজটাকে আটকানোর জন্য প্রথম তরঙ্গের সময় ব্যবহার করা হচ্ছিল রেমডিসিভির এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো ওষুধ। রেমডিসিভির এখনও দেওয়া হচ্ছে ভাইরাল লোড কমানোর জন্য। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে স্টেরয়েড। আমাদের শারীরিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিসক্রিয়তাকে এই পর্যায়ে আটকানো গেলেই ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকে ফিরতে থাকে রোগী।”
আরও পড়ুন
করোনার ভারতীয় স্ট্রেন ‘গ্লোবাল কনসার্ন’, উল্লেখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র
অর্থাৎ, রোগী দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে যাওয়া মানেই মৃত্যু— এমনটা একেবারেই না। সার্বিকভাবে করোনা আক্রান্তদের মাত্র ১.১ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। তা সত্ত্বেও বিশেষভাবে এই পর্যায়টিকেই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কারণ, অনেকক্ষেত্রেই ঘরোয়া চিকিৎসার ওপরে নির্ভর করছেন সাধারণ মানুষ। করাচ্ছেন না কোভিডের পরীক্ষাও। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে অনেকটা। ততদিনে ফুসফুসে থাবা বসাচ্ছে করোনাভাইরাস। তাই উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরই টেস্ট করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। রোগের প্রতি অবহেলা না করে সামান্য সচেতনতা অবলম্বন করলেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে সংকটকালীন এই দশা, এমনটাই আশ্বাস দিচ্ছেন চিকিৎসকরা…
আরও পড়ুন
রেমডিসিভির মানেই করোনা-জয় নয়, জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা
Powered by Froala Editor