“ফাঁকা ফ্রেম আর অকেজো হাত ঘড়ি/ নিয়ে এখন আমি কী করি?” বাংলা জানলে নির্ঘাত অনুপম রায়ের এই গানটাই গুনগুন করে আওড়াতেন ডেনমার্কের কুনস্টেন মিউজিয়ামের (Kunsten Museum) আধিকারিকরা। ভাবছেন এ আবার কেমন হেঁয়ালি? আজ্ঞে না। হেঁয়ালি নয়। সম্প্রতি এমনটাই ঘটল ডেনমার্কে (Denmark)। বিশেষ একটি শিল্পকর্মের জন্য ৮৪ হাজার ডলার অগ্রিম নিয়ে মিউজিয়ামে ফাঁকা ফ্রেম (Blank Frame) পাঠালেন এক শিল্পী!
সবিস্তারে বরং বলা যাক ঘটনাটি। আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগের কথা। সেটা ২০০৭ সাল। সাদা ক্যানভাসের ওপর ডেনমার্কের অর্থ, ‘ক্রোন’-এর নোট নানা ভঙ্গিতে সাজিয়ে এক অভিনব শিল্প গড়ে তুলেছিলেন ড্যানিস শিল্পী জেন্স হ্যানিং (Jens Haaning)। তুলে ধরেছিলেন ডেনমার্কের নাগরিকদের গড় আয়। আদতে তাঁর এই শিল্পকর্মের লক্ষ্য ছিল পুঁজিবাদকে বিদ্ধ করা। বড়ো শিল্পপতিদের আয়ের পরিমাণের থেকে সাধারণ মানুষ কতটা পিছিয়ে রয়েছেন— তা তুলে ধরা। একইভাবে ২০১১ সালে অস্ট্রিয়ার নাগরিকদের বার্ষিক গড় আয় নিয়েও একই ধরনের একটি শিল্প তৈরি করেন হ্যানিং। বলাই বাহুল্য, প্রতিবারই তাঁর এই অভিনব শিল্প সমাদৃত হয়েছিল শিল্পীমহলে।
সম্প্রতি, হ্যানিং-কে সেই পুরনো শিল্পটিই পুনর্নির্মাণের জন্য কমিশন দিয়েছিল কুনস্টেন মিউজিয়াম। শিল্প এবং পারিশ্রমিক মিলিয়ে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল মোট ৮৪ হাজার ডলার। তার মধ্যে ২৫ হাজার ডলার বরাদ্দ ছিল তাঁর পারিশ্রমিক। সেই কথা মতো গত সপ্তাহেই মিউজিয়ামে এসে পৌঁছায় তাঁর সেই ভাস্কর্য। তবে প্যাকিং খুলেই চমকে ওঠেন মিউজিয়ামের আধিকারিকরা। ফাঁকা ক্যানভাস ছাড়া আর কিছুই নেই সেখানে। ওপরে লেখা রয়েছে ‘টেক দ্য মানি অ্যান্ড রান’। হ্যাঁ, এটিই তাঁর নবনির্মিত শিল্পটির নাম।
ইতিমধ্যেই হ্যানিং-এর বিরুদ্ধে চুরি ও জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। তবে হ্যানিং সে-কথা মানতে নারাজ। তাঁর সাফ দাবি, ২০০৭ সালে তাঁর শিল্পের জন্য যথেষ্ট লাভ করলেও তাঁকে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের তরফে উপযুক্ত লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি সাম্প্রতিক কাজের জন্য তাঁকে যে অর্থ দেওয়া হয়েছিল, তার থেকে পারিশ্রমিক বাদ দিলে তা ডেনমার্কের গড় বার্ষিক আয়ের থেকে কম। ফলত, পুনর্নির্মাণ করতে গেলে তাঁকে পকেট থেকে বড়ো অঙ্কের টাকা খসাতে হত। শিল্পীদের প্রতি এই অবিচারের বিরুদ্ধেই তিনি ফাঁকা ফ্রেম পাঠিয়েছেন মিউজিয়ামে।
আরও পড়ুন
ফেলুদা-কাহিনির চরিত্রগুলির স্কেচ এঁকে ভাইরাল কলকাতার শিল্পী
তবে তাঁর তৈরি এই শৈলীটিও জায়গা করে নিয়েছে মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে। ‘ওয়ার্ক ইট আউট’ শিরোনামের বিশেষ বিভাগে প্রদর্শিত হচ্ছে হ্যানিং-এর ‘ফাঁকা ফ্রেম’। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। যদিও মিউজিয়ামের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সমস্ত টাকা ফিরত না পেলে, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে হ্যানিং-এর বিরুদ্ধে…
আরও পড়ুন
‘ধ্বংসেই শিল্পের সার্থকতা’, নিজের তৈরি মূর্তিতেই আগুন ধরিয়েছিলেন এই শিল্পী!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মহিলা শিল্পীদের কি প্রদর্শনীতে উলঙ্গ হয়ে ঢুকতে হবে? প্রশ্ন তুলেছিলেন গেরিলা গার্লরা