সরকারের পরোয়ানা এসেছিল কিছুদিন আগেই। এতদিন সরকারি আবাসনেই থাকতেন প্রখ্যাত নৃত্যসমালোচক সুনীল কোঠারি। ৮৭ বছর বয়সে এসে সেই বাসস্থান ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি আসে তাঁর কাছে। সুনীল কোঠারির অপমানের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন বহু বুদ্ধিজীবী। তবে এর মধ্যেই এসে গেল অন্তিম পরোয়ানা। শুধুই সরকারি আবাসন নয়, এই পৃথিবী থেকেই বিদায় নিলেন। মাসখানেক আগেই তাঁর শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এই সংক্রমণের ফলেই শেষ পর্যন্ত হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যায়। রবিবার সকালেই দিল্লির হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
১৯৩৩ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম সুনীল কোঠারির। সাধারণ ছেলেমেয়েদের মতোই তাঁরও ছোট থেকে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। পড়াশোনার গোলকধাঁধায় ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত চার্টার অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পাশ করলেন তিনি। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজেও ঢুকলেন। তবে এর মধ্যেই তাঁর জীবনে এসে গেল এক অভাবনীয় পরিবর্তন। রবিশঙ্করের একটি অনুষ্ঠান তাঁর ভাবনার জগতকে বদলে দিল। আঙ্গিক ভঙ্গির মধ্যে যে সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, শুরু হল তারই অনুসন্ধান। মধ্যবয়সে এসে আর নাচ শিখতে চাইলেন না। তবে শিখতে শুরু করলেন নানা ধরণের নৃত্যশৈলীর রীতি, তাদের ইতিহাস।
আজও ভারতের নৃত্যের ইতিহাস জানতে গেলে তাঁর লেখাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। কত্থক, ভারতনাট্যম হোক বা ওড়িশি কিংবা ছৌ অথবা কুচিপুরী – সমস্ত নাচের ইতিহাস ও তার রীতি বিশদে আলোচনা করেছেন তিনি। সারা জীবনে লিখেছেন ২০টির বেশি গ্রন্থ। অবসর নেওয়ার আগে কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিশঙ্কর নামাঙ্কিত অধ্যাপকের পদে আসীন ছিলেন তিনি। শিক্ষকতা করেছেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতেও।
সারা জীবনের কাজের জন্য পেয়েছেন অসংখ্য সম্মান। ২০০১ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। পেয়েছেন সঙ্গীতনাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, গৌরব পুরস্কার। তবু জীবনের শেষ মুহূর্তের অপমান কি সত্যিই পাওনা ছিল তাঁর? সরকারের বিজ্ঞপ্তি ছিল, ৩১ ডিসেম্বরের আগেই ছাড়তে হবে আবাসন। হ্যাঁ, সেই ডিক্রি মাথায় নিয়েই বিদায় নিলেন তিনি।
Powered by Froala Editor