ক্রমাগত মিশছে বিষ, সবুজ আগাছায় ভরে উঠেছে ডাল লেক

চতুর্দিক থেকে ঘিরে রয়েছে হিমালয়। তার মাঝেই সুবিশাল হ্রদ। ভেসে বেড়াচ্ছে অজস্র ছোটো-বড়ো হাউসবোট, শিকারা। কাচের মতো জলে আন্দোলিত হচ্ছে তাদের প্রতিচ্ছবি। এক কথায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়েই দেখতে হয় এই অপার্থিব দৃশ্য। হ্যাঁ, কাশ্মীরের (Kashmir) অন্যতম আকর্ষণ ডাল লেকের (Dal Lake) কথাই হচ্ছে। কিন্তু তার বর্তমান চেহারা দেখলে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হবে যে কাউকে। স্বচ্ছ জলের দেখা পাওয়াই দুষ্কর। সংস্কারের অভাবে গোটা লেকটাই ঢেকে গেছে সবুজ আগাছাতে (Weeds)।

গত বছর মার্চ মাসে করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন ঘোষিত হয়েছিল দেশজুড়ে। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কাশ্মীরের দরজা। পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ হওয়ায় থমকে যায় ডাল লেক সংস্কারের কর্মসূচিও। আর তারপর থেকেই নৈসর্গিক এই হ্রদে ক্রমশ জাল বিস্তার করে চলেছে আগাছা। পুরু মস, শ্যাওলা এবং কচুরিপানার আস্তরণে ঢেকে গেছে লেকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সেইসঙ্গে লেকের ওপর যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনাও। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে শিকারা প্যাডেল করতেও রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে চালকদের।

তবে শুধু আগাছাই নয়, ক্রমশ অবনতির দিকে এগোচ্ছে হ্রদের জলের স্বাস্থ্যও। ২০১৬ সালে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছিল, ভয়াবহ দূষণের শিকার ডাল লেকের ৩২ শতাংশ জল। সুস্বাস্থ্য ধরে রেখেছে কেবলমাত্র ২০ শতাংশ জল। বর্তমানে আরও খারাপের দিকে এগিয়েছে পরিস্থিতি। কিন্তু এই দূষণের কারণ কি তবে পর্যটকরাই?

না, তেমনটা নয়। বলা যেতে পারে, ডাল লেকে ভাসমান শিকারাগুলির জন্য দূষণের পরিমাণ প্রায় শূন্য। তবে? ডাল লেকের জলদূষণের মূল উৎস হল পার্শ্ববর্তী শহরের নিকাশি ব্যবস্থা। শহরের কমপক্ষে ১৫টি বড়ো নালা এসে মিশেছে এই হ্রদে। আর সেই নর্দমা দিয়েই হ্রদের জলে মিশছে কারখানাজাত ফসফরাস এবং নাইট্রোজেনযুক্ত দূষক। যার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে হ্রদের বাস্তুতন্ত্রেও। ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিদিন লেকের জলে মিশছে ১.১ কোটি গ্যালনের দূষিত জল। 

আরও পড়ুন
রাস্তার মধ্যেই ধোঁয়া পরীক্ষা, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পথে নামছে কলকাতা পুলিশ

গত আগস্ট মাসেই ডাল লেক সংস্করণের জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ করে প্রশাসন। আনা হয় বিশেষ যন্ত্রও। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হলেও, পরিষ্কারের কাজ সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ছোটো ছোটো ডিঙি নৌকা এবং শিকারাতে করে বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয়রাই। কিন্তু এভাবে কি সত্যিই পাল্লা দিয়ে ওঠা যাবে পরিস্থিতির সঙ্গে? প্রশাসনের তৎপরতায় অবৈধ স্থাপন এবং নিকাশি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে পরিস্থিতি। আর সরাসরি তার প্রভাব পড়বে পর্যটন শিল্পে। আর্থিক দিক থেকে বড়ো মাপের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখন দেখার তাঁদের কাতর আর্জিতে কতটা সাড়া দেয় প্রশাসন…

আরও পড়ুন
দূষণের জেরে ভারতবাসীর গড় আয়ু কমবে ৯ বছর!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ডাল লেকে ভাসমান এটিএম, চমক এসবিআই-এর