করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ সমস্ত স্কুল। শিশুরাও মূলত বাড়িতেই থেকেছে। কিন্তু তার পরেও শিশু নির্যাতন সহ শিশুদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অন্যান্য আইনি অপরাধের (Crime Against Children) সংখ্যা সেই অর্থে কমেনি। এমনটাই উঠে এল সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর সমীক্ষার ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে একটি অলাভজনক সংস্থা। আর তাতেই দেখা গিয়েছে, ২০২০ সালে ভারতে দৈনিক অন্তত ৩৫০ শিশুর বিরুদ্ধে আইনি অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যাটা নিশ্চই তার চেয়েও অনেকটাই বেশি।
চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ বা সংক্ষেপে ক্রাই নামক সংস্থাটি বিগত বেশ কিছু বছর ধরে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে। আর তাতেই দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত অপরাধের সংখ্যা কমেছে মাত্র ১৩ শতাংশের একটু বেশি। ২০১৯ সালে সারা দেশে মোট ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৮৫টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল। অর্থাৎ দৈনিক ৪০০টি অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল। ২০২০ সালে সেই সংখ্যাটা কমে দৈনিক ৩৫০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে সার্বিক অপরাধের সংখ্যা কিছুটা কমলেও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বাল্যবিবাহ এবং অনলাইন নির্যাতনের ঘটনা।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আর ইন্টারনেট মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। অতিমারী পরিস্থিতিতে পড়াশোনা থেকে শুরু করে শিশুদের সমস্ত জগতটাই ইন্টারনেটের আওতায় বন্দি। আর এর ফলেই এই ধরনের অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন সমীক্ষকরা। সার্বিক পরিসংখ্যানে এই ধরনের অপরাধের ঘটনায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। দেশের মোট অপরাধের সংখ্যার ১৩.২ শতাংশই ঘটেছে সেখানে। এরপর রয়েছে যথাক্রমে উত্তরপ্রদেশ (১১.৮ শতাংশ) এবং মহারাষ্ট্র (১১.১ শতাংশ)। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। দেশের মোট অপরাধের ৭.৯ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে।
এছাড়াও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনায় অতিমারী সময়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন সমীক্ষকরা। বহু ক্ষেত্রে পরিবারের অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে কাজে নামতে হয়েছে শিশুদের। এমনকি ৫-১০ বছরের শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। সব মিলিয়ে বিগত ১০ বছরে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। এভাবেই কি দেশ থেকে একটু একটু করে হারিয়ে যাবে শৈশব? এই মুহূর্তে সচেতন না হলে আগামীদিনে সত্যিই বড়ো সংকট আসতে চলেছে।
Powered by Froala Editor