সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে গোটা বিশ্বেই। ভারতের বুকে যেমন ঘন ঘন আছড়ে পড়ছে একের পর এক সাইক্লোন, তেমনই টর্নেডো কিংবা হারিকেন আছড়ে পড়ার হারও বেড়েছে পাল্লা দিয়েই। এবার আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সাম্প্রতিক গবেষণায়। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ক্রমশ বাড়ছে সাইক্লোনের (Cyclone) ভয়াবহতাও। আগামীদিনে পৃথিবীর জনবহুল অঞ্চলগুলিতে (Populated Regions) আরও বেশি করে তাণ্ডব চালাবে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড়। ফলে, লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাভাবিক জনজীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে সাইক্লোন।
এতদিন পর্যন্ত প্রধানত বিষুব রেখার উত্তর ও দক্ষিণে ক্রান্তীয় অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের প্রভাব। কিন্তু সেই সীমানা ছাড়িয়ে ক্রমশ মধ্যে অক্ষাংশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এই ধরনের সাইক্লোন। ফলে, আগামীদিনে ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের বিধ্বংসী রূপ দেখা যাবে বেজিং, নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, টোকিও-র মতো শহরগুলিতেও। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে বিষয়টা। ট্রপিক্যাল সাইক্লোন কিংবা ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় আর আগেও ভারত তথা বাংলার বুকে আছড়ে পড়েছে বহুবার। কিন্তু তা মূলত ধ্বংসলীলা চালাত উপকূলবর্তী অঞ্চলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমফান, ইয়াস কিংবা বুলবুলের মতো ঝড়গুলি পরিধি বাড়িয়ে প্রকোপ বিস্তার করেছে তুলনামূলক উত্তরে অবস্থিত মালদা বা নদিয়ার মতো জেলায়।
এই ঘটনার পিছনেও হাত রয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নের। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া ও মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার ফলে ক্রমশ কমছে মেরু অঞ্চল এবং বিষুব অঞ্চলের মধ্যে তাপমাত্রার ব্যবধান। আর সেই কারণেই ক্রমশ ক্রান্তীয় অঞ্চল ছাড়িয়ে মধ্য অক্ষাংশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। পাশাপাশি ফাঁকা অঞ্চল বা কৃষিক্ষেত্রের থেকে তুলনামূলকভাবে উষ্ণতা বেশি থাকে ঘন জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে। এই অঞ্চলগুলিতে কার্বন নির্গমনের হার বেশি থাকায় অঞ্চলিক উষ্ণতাও খানিক বেশি হয়। ফলে, হ্রাস পায় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ। এর ফলে, এই পথ ধরেই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে ক্রমশ। কাজেই আগামীতে ঘনজনবসতি অঞ্চল আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। পাশাপাশি একইভাবে টর্নেডোর প্রকোপ বাড়বে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে।
সংশ্লিষ্ট গবেষণার সঙ্গে যৌথভাবে যুক্ত ছিলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিরিক অ্যাডমিনিস্টেশন’-এর গবেষকরা। সম্প্রতি ‘নেচার জিওসায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। কিন্তু আগাম সমস্যাগুলির কথা উঠে এলেও, এই সমস্যার কোনো সুস্পষ্ট সমাধানের খোঁজ এখনও দিতে পারেননি গবেষকরা…
Powered by Froala Editor