করোনার হানায় জর্জরিত দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্যই। সংক্রমণ বেড়েই চলেছে দ্রুত হারে। এর মধ্যেই দেখা দিল নতুন চিন্তার কারণ। আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাস দিল ঘূর্ণিঝড়ের। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের কারণে এই জন্ম নেবে এই ঘূর্ণিঝড়। হানা দেবে এপ্রিলের শেষে অথবা মে মাসের শুরুতেই। যার ফলে ঝড়-বৃষ্টির সম্মুখীন হতে পারে আন্দামান-নিকোবর এবং অন্যান্য উপকূলবর্তী রাজ্যগুলি।
আবহাওয়া দপ্তর জানায়, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ শক্তিশালী হচ্ছে আরও। প্রাথমিকভাবে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানবে এই ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু তারপরে ঝড়ের গতিপথ কোনদিকে যাবে, তা বলা সম্ভব নয় এখনই। তবে এই মুহূর্তেই দেশের মূল ভূখণ্ডে সতর্কতা জারি করেনি আবহাওয়া দপ্তর।
প্রতিবছর বর্ষার আগে এবং পরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পরে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে। মূলত এই সময়েই তৈরি হয় নিম্নচাপগুলি। তার দিকেই এগিয়ে চলেছে পরিস্থিতি। প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই, বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে তৈরি হওয়া এই নিম্নচাপগুলির পূর্বাভাস দেয় মৌসম ভবন।
ভারতের মূল ভূখণ্ডের দিকে এই ঝড়ের এগিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এপ্রিলে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গন্তব্য হয় বাংলাদেশ বা মায়ানমার। পরিসংখ্যান বলছে, ১৮৯১-এর পরে পশ্চিমবঙ্গে কোনো ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েনি এপ্রিল মাসে। মে মাসে এখনো পর্যন্ত সাতটি ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তার মধ্যে একটি আয়লা। মায়ানমার এবং বাংলাদেশের দিকে ঘুরে গেছে ৪০টির বেশি ঘূর্ণিঝড়।
তবে প্রকৃতির খেয়ালখুশি কতোটাই বা বোঝা যায় আগে থেকে? এই সকল সম্ভাবনা এবং পরিসংখ্যানের উল্টোদিকেও ঘটেছে একাধিক ঘটনা। গত বছরেই এপ্রিলে তৈরি হয়েছিল ‘ফণী’। আছড়ে পড়েছিল উড়িষ্যার উপকূলে। তাছাড়া নভেম্বরের ‘বুলবুল’-ও আবহাওয়াবিদদের মতে অনেকটাই ব্যতিক্রমী। ওই সময়ে শেষ ১৩০ বছরে মাত্র ৪টি ঘূর্ণিঝড় হানা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
এখনো কিছু বলা না গেলেও, এই ঝড় মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করলে কল্পনাতীত ক্ষতি হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায়ের দফারফা হয়ে যাবে ভারতে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণও। যদি ভারতে না ঢুকে বাংলাদেশে চলে যায় এই ঘূর্ণিঝড়, তাহলেও প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায়।
এপ্রিলের শেষে এই ঝড়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে বলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ঝড়ের পূর্বেই নির্ধারিত হয়েছে নিম্নচাপের নামকরণ। ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম নিলেই তার নাম হবে ‘উম্পুন’। থাইল্যান্ডের দেওয়া এই নাম।
এখন পরবর্তী আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ওপরেই ভরসা করে আছে ভারত। চিন্তা বাড়ছে দেশের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে প্রশাসন। কিন্তু অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই কোনো। ভারতের এই কঠিন সময়ের ভাগ্যকে এখন দোলাচলে রেখেছে এই ঘূর্ণির সম্ভাবনা।