রাজ কাঁকড়া বা লিমুলাস। ইতিহাসের দিক থেকে দেখতে গেলে ডাইনোসরেরও আগে পৃথিবীতে এসেছিল এই প্রাণীটি। তবে কোনো পরিস্থিতিতেই অবলুপ্ত হয়নি তাদের অস্তিত্ব। ৪৫ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে অবিবর্তিত থাকার কারণে জীবন্ত জীবাশ্মও বলা হয় এদের। তবে আমফানের তাণ্ডবে বিপন্ন প্রাক-জুরাসিক যুগের এই প্রাণীটি।
চারটি প্রজাতির মধ্যে রাজ কাঁকড়ার দুটি প্রজাতির অস্তিত্ব রয়েছে ভারতে। তাও এই উপস্থিতি কেবলমাত্র দুটি রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে উড়িষ্যার ভিতরকণিকা পর্যন্ত অঞ্চলে দেখা মেলে লিমুলাসের। কিন্তু মাত্র ছ’ মাসের ব্যবধানেই বাংলার উপকূলে আছড়ে পড়েছে দুটি ঘূর্ণিঝড়। আমফান ও বুলবুল। আর তাতেই ধ্বংস হয়ে গেছে এই প্রাণীটির আবাসস্থল। আমফানের তাণ্ডবে সুন্দরবনের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। আর এই অঞ্চলের অগভীর, নরম কাদা-সংযুক্ত স্থানই এর উপযুক্ত বাসস্থান। সেই সঙ্গে হাওয়ার দাপটে ভেসে এসেছে প্লাস্টিকসহ অজৈব আবর্জনা। এছাড়াও মাছ ধরার জাল জলোচ্ছ্বাসে ছিঁড়ে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন অংশে। ফলে অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন রাজ কাঁকড়া।
ইতিমধ্যেই IISER এবং ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের আধিকারিক এবং গবেষকরা অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন এই প্রাণীটির বাসস্থান ফিরিয়ে দিতে। প্লাস্টিক, অন্যান্য জঞ্জাল উপকূলের অগভীর অংশ থেকে সরিয়ে ফেলাই তার প্রথম ধাপ। আর তার জন্যই বেছে নেওয়া হয়েছে সুন্দরবনেরই উপার্জনহীন মৎস্যজীবীদের। ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার হওয়ার পর আহত প্রাণীগুলিকে উদ্ধার করে পরিচর্যা করবেন গবেষকরা। তারপর তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে প্রকৃতিতে।
তবে লিমুলাসের জন্য পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল একটি অঞ্চল নতুন করে তৈরির কথাও ভাবছে আইআইসিইআর। যার প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে হলিডে, বকখালি এবং কলসদ্বীপকে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা প্রাণীগুলির চিহ্নিতকরণও করা হবে। কিছু লিমুলাসের গায়ে স্যাটালাইট ট্যাগিং করা হবে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য।
লিমুলাসের রক্ত কপার-সমৃদ্ধ হওয়ায় চিকিৎসা এবং ঔষধ শিল্পে বড়ো ভূমিকা রয়েছে প্রাণীটির। প্রকাশ্যে এই তথ্য আসায় গত কয়েকবছরে বেড়েছে চোরাশিকারও। তার ওপরেই ঝড়ের ধ্বংসলীলা। সব মিলিয়ে কোটি কোটি বছর ধরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এই প্রাণীটিই এখন সংকটে। তাই রাজ কাঁকড়াকে অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।
Powered by Froala Editor