সেরে উঠল পক্ষাঘাতগ্রস্ত ইঁদুর! বিরল কৃতিত্ব বিজ্ঞানীদের

মানুষের সমস্ত কাজকর্ম এবং প্রতিক্রিয়ার মূলে রয়েছে স্নায়ুতন্ত্র। তবে জন্মের পর মানুষের দেহে অপরিবর্তিত থাকে স্নায়ুর সংখ্যা। কাজেই বড় কোনো দুর্ঘটনায় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর নতুন করে তৈরি করতে পারে না মানবদেহ। ফলত কাজ করা বন্ধ করে দেয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। যাকে সাধারণ ভাষায় পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস বলেই জানি আমরা। কিন্তু পক্ষাঘাত থেকেও মুক্তি মিলতে পারে মানুষের। সম্প্রতি জার্মান গবেষকদের চমকপ্রদ আবিষ্কার এই সম্ভাবনাকেই জাগিয়ে তুলছে।

জার্মানির বোচামের রুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি তৈরি করেছেন একটি বিশেষ ডিজাইনার প্রোটিন। যা স্নায়ু কোষের কোষ বিভাজনকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে জন্ম নেয় নতুন স্নায়ু কোষের। ধীরে ধীরে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে পুনর্গঠন সম্ভব হয় সম্পূর্ণ স্নায়ুর। এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

পরীক্ষাগারে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ইঁদুরের দেহে এই প্রোটিনের ব্যবহারে নিউরাল লিঙ্ক পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। ইনজেকশনের মাধ্যমে তাঁরা এই প্রোটিনটি প্রয়োজ করেছিলেন ইঁদুরটির মস্তিষ্কে। তার প্রায় তিন সপ্তাহ পরেই সুফল মেলে তাঁদের। পক্ষাঘাতগ্রস্ত ইঁদুরটি বর্তমানে হাঁটতে পারছে একেবারেই স্বাভাবিকভাবে। এই উল্লেখযোগ্য গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে নেচারের কমিউনিকেশনস জার্নালে।

তবে এই চিকিত্সার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত লুকিয়ে রয়েছে। যে প্রাণীর ওপরে এই প্রোটিন প্রয়োগ করা হবে, তার জিনগত তথ্যের বাহককে প্রতিস্থাপন করে তবেই বানানো সম্ভব এই প্রোটিনের। পাশাপাশি তার প্রয়োগ দরকার মস্তিষ্কে। হাইপার-ইন্টারলিউকিন নামের এই প্রোটিন একমাত্র মস্তিষ্কের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম সারা দেহের স্নায়ুতন্ত্রে। তা না হলে নতুন করে কোষ বিভাজন থেকে যাবে অধরাই। 

দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই গবেষণার একটা ধাপ পেরতে সক্ষম হলেন বিজ্ঞানীরা। এবার পালা কুকুর, বাঁদর কিংবা শূকরের মতো বড়ো কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে এর প্রয়োগ করা। তাতে আশানুরূপ ফল মিললে তবেই মানবদেহের জন্য ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা করা যাবে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এখনও হয়তো তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কয়েক বছর। তবে সেই দিন খুব বেশি দূরে নেই, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে এই গবেষণার ফলাফল...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মাত্র দুটি ড্রাগের মিলিত প্রয়োগেই সেরে উঠবে ফুসফুসের ক্যানসার, যুগান্তকারী আবিষ্কার

More From Author See More

Latest News See More