কুমিরের পেটে ডাইনোসর! এমন জীবাশ্মের সন্ধান এই প্রথম

কথায় আছে জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। তবে আজ থেকে কয়েক কোটি বছর আগের পৃথিবীতে খাদ্য-খাদকের পিরামিডটা ছিল একটু অন্যরকম। তখন ডাঙায় ঘুরে বেড়াত দৈত্যাকার সব ডাইনোসররা। আর জলে কুমির। কিন্তু খাদক তালিকার শীর্ষে থাকা এই দুই প্রাণীর মধ্যেও যে সংঘাত ছিল, এবার এমনটাই প্রকাশ্যে এল সাম্প্রতিক গবেষণায়। প্রাগৈতিহাসিক কুমিরের (Crocodile) পেটের ভেতর থেকে আস্ত ডাইনোসর (Dinosaur) আবিষ্কার করলেন গবেষকরা। 

হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন অস্ট্রেলিয়ান (Australia) গবেষকরা। অবশ্য মূল আবিষ্কারটি হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে কুইন্সল্যান্ডে। ২০১০ সালে। অস্ট্রেলিয়ার জীবাশ্মবিদ ম্যাট হোয়াইট এবং তাঁর দল আবিষ্কার করেছিলেন একটি প্রকাণ্ড কুমিরের জীবাশ্ম। অস্ট্রেলিয়ান এফ অফ ডাইনোসরস মিউজিয়ামেই তা সংরক্ষিত ছিল এতদিন। তবে যেকোনো জীবাশ্মকেই বিশ্লেষণ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। পাথরের স্তর কেটে বের করতে হয় প্রস্তরীভূত প্রাণীজ দেহাবশেষ। সেই কাজটাই চলেছে বিগত ১০ বছর ধরে। 

সম্প্রতি, কুমিরের মূল দেহাবশেষ উদ্ধার করার পরই চমকে ওঠেন গবেষকরা। এক্স-রে এবং সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে উঠে আসে কুমিরের পেটের ভেতর রয়েছে আরও একটা পূর্ণ প্রাণী কঙ্কাল। না, সেটি কোনো স্তন্যপায়ী বা জলজ প্রাণী নয়, সেটি একটি ডাইনোসর! গবেষকদের অভিমত কুমিরের পেটে পাওয়া ডাইনোসরটি একটি অর্নিথোপড। অর্থাৎ, তৃণভোজী ডাইনোসরটির চঞ্চু আছে অনেকটা পাখির মতোই। উল্লেখ্য, প্রাগৈতিহাসিক যুগের এমন খাদ্য-খাদক সম্পর্কের অদ্ভুত নিদর্শন, এই প্রথম পেলেন গবেষকরা। 

আর কুমির? সেটিও সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতি। গবেষকরা তার নামকরণ করেছেন ‘কনফ্রাক্টোসাচাস সরোকটোনোস’। যার বাংলা অর্থ, ‘ডাইনোসরখেকো’। জীবাশ্মের বয়স জানাচ্ছে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে বিচরণ ছিল এই প্রাণীটির। 

আরও পড়ুন
ডাইনোসরের পরিণত ডিম, ভিতরে আস্ত ভ্রূণ! অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা

তবে যাই হোক না কেন, ডাঙায় উঠে ডাইনোসর শিকারের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না কুমিরটিরও। কারণ, জীবাশ্মে অক্ষত ছিল না তার নিজের দেহও। অনুপস্থিত ছিল তার লেজ। গবেষকদের অভিমত, ডাঙায় শিকার করতে ওঠার সময় ক্রেটিসিয়াস গোত্রের ডাইনোসরের আক্রমণেই লেজ হারায় সে। আর সেটাই নাকি কুমিরের শরীরের সবচেয়ে সুস্বাদু অংশ। তবে কুমিরটি ঠিক কীভাবে মারা গিয়েছিল তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নন গবেষকরা। দীর্ঘ গবেষণার পর, পুনরায় প্রাগৈতিহাসিক জীবাশ্মটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান এজ অফ ডাইনোসর মিউজিয়ামে। এবার দর্শকরাও সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন এই অদ্ভুত দৃশ্য…

আরও পড়ুন
সমাজবদ্ধ জীব ছিল ডাইনোসরও! উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভারতের নিজস্ব ‘জুরাসিক পার্ক’, দাপিয়ে বেড়াত ১৩টি প্রজাতির ডাইনোসর!