নেই পিপিই কিট, ঝুঁকি নিয়েই কাজ চালাচ্ছেন শ্মশানকর্মীরা

ভারতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা দুহাজার ছাড়িয়েছে অনেকদিন হল। নিভছে না শ্মশানের চিতা। মহামারীর এই কঠিন সময়ে বারবার উঠে আসছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা। আর শ্মশানকর্মীরা? কার্যত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাঁদের জীবন। অথচ একার্থে ‘কোভিডযোদ্ধা’ হয়েও, সম্পূর্ণ অনালোচিতই রয়ে গেছেন তাঁরা। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল তাঁদের অসহায়তার ছবি।

নয়ডার সেক্টর ৯৪-এর অন্তিম নিবাস শ্মশান। সেই শ্মশানের প্রবেশদ্বারেই ঝোলানো রয়েছে হাতে লেখা নোটিশ বোর্ড। ‘গ্রেটার নয়ডা থেকে মরদেহ এখানে দাহ করা যাবে না’। কারণ, খুবই স্পষ্ট। শ্মশানের প্রতিটা প্ল্যাটফর্মই উপচে পড়েছে কোভিড আক্রান্তদের মৃতদেহে। একসঙ্গে দুটি চুল্লিতেই দাহ করা হচ্ছে মরদেহ। কিন্তু তা সত্ত্বেও লম্বা লাইন অ্যাম্বুলেন্স এবং শববাহী গাড়ির। আর কর্মী? মাত্র দু’জন।

যেখানে স্বাভাবিক সময়ে সারাদিনে হয়তো দুটি কিংবা তিনটি মৃতদেহ আসত এই শ্মশানে আর শ্মশানকর্মীরা? কার্যত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাঁদের জীবন। অথচ একার্থে ‘কোভিডযোদ্ধা’ হয়েও, সম্পূর্ণ অনালোচিতই রয়ে গেছেন তাঁরা। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল তাঁদের অসহায়তার ছবি। এখন সেই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫-এর কাছাকাছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে একটানা ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে কর্মীদের। দুর্বল শরীরে টলতে টলতেই কার্যত কাজ করে চলেছেন তাঁরা। বাড়তি কর্মী নিয়োগের কোনো ব্যবস্থাই করেনি প্রশাসন। পরিস্থিতি এমন যে কাজের মধ্যে সামান্য জল খাবার সুযোগ পর্যন্তও পাচ্ছেন তাঁরা। কেন না, জল খেতে গেলেও যেতে হবে খানিক দূরের নদীর ঘাটে। জরুরি পরিস্থিতিতে শ্মশানের মধ্যে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে উঠতেও ব্যর্থ প্রশাসন।

বিরামহীন এই কাজের পাশাপাশি রয়েছে জীবনের ঝুঁকিও। স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে তাঁদের জন্য পিপিই কিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই কিট পরে দাহ করার কাজ চালিয়ে যাওয়া এক কথায় অসম্ভব। কারণ, সাধারণ কাঠের চিতাই হোক কিংবা বৈদ্যুতিক চুল্লি— উচ্চ তাপমাত্রায় প্লাটিকের পিপিই কিট গলে চামড়ায় জড়িয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। ফলত, কেবলমাত্র মাস্ক পরেই এই কাজ করছেন তাঁরা। কোনোরকম জীবনবিমারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি তাঁদের জন্য। সম্প্রতি, প্রশাসনের কাছে সেই আবেদন করলেও কোনো প্রত্যুত্তর পাননি তাঁরা।

আরও পড়ুন
সীমান্ত ছেড়ে, করোনা মোকাবিলায় এবার সামিল সামরিক চিকিৎসকরাও

অন্যদিকে, অমানবিক এই কাজের জন্য তাঁরা অতিরিক্ত বেতনের সুবিধাও পাচ্ছেন না। কেননা মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন আগে থেকেই নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। মহামারীর পরিস্থিতিতে এখন কোভিড আক্রান্ত হলে, সামান্য ক্ষমতা দিয়ে চিকিৎসার খরচই বা চালাবেন কী করে তাঁরা? উত্তর নেই। চরম অনিশ্চয়তা ঘিরে রয়েছে তাঁদের। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকাও তো যায় না। তাই অক্লান্তভাবে এই অসম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
রক্তনালিতে 'বিষ' ছড়ায় করোনার স্পাইক প্রোটিন!

তবে এই ছবি শুধুমাত্র নয়ডার নয়। দিল্লি, ইন্দোর, ভোপাল, লখনৌ— সর্বত্রই শ্মশানকর্মীদের দুর্দশা পৌঁছেছে এই পর্যায়ে। কার্যত মুক্তি নেই তাঁদের। কেবলমাত্র সংক্রমণ আয়ত্তে এলেই সামান্য নিস্তারের পথ পাবেন তাঁরা। সেই সুদিনের দিকে তাকিয়েই দিন কাটাচ্ছেন উপেক্ষিত কোভিডযোদ্ধারা…

আরও পড়ুন
করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে বিপর্যস্ত নেপাল, আত্মসমর্পণ সরকারের

Powered by Froala Editor

More From Author See More