পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল নেই চাঁদের। আর সেই কারণেই সৃষ্টির আদিকাল থেকে বিভিন্ন উল্কা এবং ধূমকেতুর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে চলেছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের। তৈরি হয়েছে অসংখ্য ক্র্যাটার বা গর্ত। সাধারণ মানুষের কাছে যা চাঁদের ‘কলঙ্ক’ নামেই পরিচিত। তবে শুধু কি মহাজাগতিক ঘটনার জন্য সৃষ্ট হয় এই ক্র্যাটার (Crater)? সেটাই স্বাভাবিক। তবে এবার মানুষের কার্যকলাপেই চাঁদের বুকে জন্ম নিতে চলেছে আরও একটি কলঙ্ক।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। মানুষের কার্যকলাপে। আজ থেকে প্রায় এক দশক আগের কথা। চিন থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছিল একটি বিশেষ রকেট (Rocket)। যা লুনার মিশনের একটি পরীক্ষামূলক মডেল ছিল। তবে মাঝপথেই ব্যর্থ হয় সেই পরীক্ষা। রকেটের উপরের অংশটি ভেঙে ধেয়ে আসে পৃথিবীর দিকে। তবে দুর্ঘটনা ঘটেনি কোনো। বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সেটি। অন্যদিকে নিচের অংশটি স্পেস জাঙ্ক হিসাবে ইতস্তত ভেসে বেড়াতে থাকে মহাকাশে। এবার ভাসমানরত সেই অংশটিই আঘাত আনতে চলেছে চাঁদের বুকে। তেমনই বলছে গবেষকদের গণনা।
নাসার অনুমান, আগামী শুক্রবার ৯৩০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে চাঁদের বুকে আছড়ে পড়বে রকেটের অবশিষ্টাংশটি। আর তাতে সৃষ্টি হবে প্রায় ৩৩-৬৬ ফুট গভীর একটি ক্র্যাটার। সংঘর্ষে উৎপন্ন চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ধূলিকণার মেঘ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে কয়েকশো মাইল। তবে চন্দ্রপৃষ্ঠের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কাছে কোনো অরবাইটার না থাকায়, সরাসরি এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে না বিজ্ঞানীদের পক্ষে।
অবশ্য চিনের মহাকাশ সংস্থা বিজ্ঞানীদের এই দাবি অস্বীকার করে আঙুল তুলেছেন মার্কিন সংস্থা স্পেস-এক্সের দিকে। ২০১৫ সালে স্পেস-এক্সের একটি মহাকাশযানও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল মহাশূন্যে। তার ধ্বংসাবশেষও ভেসে বাড়াচ্ছে শূন্যেই। তবে এটি যে সেই রকেটের অংশ নয় তা দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর নিশ্চিত করেছে স্পেসএক্স।
আরও পড়ুন
ব্রিটিশ শিল্পীর আঁকা ছবির ‘প্রদর্শনী’ চাঁদে
তবে সংশ্লিষ্ট রকেটের অবশিষ্টাংশটি যে মহাকাশ সংস্থারই হোক না কেন, এই ঘটনায় যে প্রাকৃতিক স্থিতির ব্যাঘাত ঘটবে তাতে সন্দেহ নেই কোনো। ধূলিকণা এবং মহাকাশযানের টুকরোর ভাসমান মেঘ পরবর্তীতে যেকোনো চন্দ্রাভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনটাই অনুমান গবেষকদের। বহু যুগ আগে থেকেই স্পেস জাঙ্ক ট্র্যাকিং-এর আবেদন জানিয়ে আসছেন প্রথম সারির পদার্থবিদরা। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক মহাকাশ দুর্ঘটনার ফলে আরও জোরালো হচ্ছে সেই দাবি। কিন্তু মহাকাশ বর্জ্য অপসারণ কিংবা তার ব্যবস্থাপনা বেশ খরচ সাপেক্ষ হওয়ায়, তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থা কিংবা রাষ্ট্রগুলিও। একটা সময় পরে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে এই বর্জ্যগুলিই। আসন্ন সেই অন্ধকার দিনের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গবেষকরা…
আরও পড়ুন
সূর্যের পর এবার কৃত্রিম চাঁদ তৈরির পথে চিন
Powered by Froala Editor