কোভিডজয়ীদের মধ্যে বাড়ছে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা, সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

সম্প্রতি সরকারের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, গত ৭ মে-ই দ্বিতীয় তরঙ্গের শিখর পার করে এসেছে ভারত। সংক্রমণের গ্রাফও বর্তমানে খানিক নিম্নমুখী। কিন্তু বদলায়নি পরিস্থিতি। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও, অব্যাহত রয়েছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। রোজই তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। আর যাঁরা সুস্থ হয়ে উঠছেন কোভিড থেকে? না, নিস্তার নেই তাঁদেরও। হৃদরোগ কিংবা ব্রেইনস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে যাচ্ছে প্রবলভাবেই।

গতবছর আগস্ট মাসেই ইতালির প্লস ওয়ানে জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রথম দাবি করেছিল, হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে কোভিড আক্রান্তের সম্ভাবনা স্বাভাবিকের থেকে বেশি। শুধু তাই নয়, কোভিড আক্রান্তদের সেরে ওঠার পরেও বেড়ে যায় হৃদরোগের প্রবণতা। ব্রেনস্ট্রোক হচ্ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। ইতালি ছাড়াও একাধিক মার্কিন গবেষণা ও সমীক্ষা সমর্থন জানিয়েছে এই বিষয়টিকে। এমনকি পরিসংখ্যান বলছে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরে ৪০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে এই ধরনের সমস্যা।

“এই বিষয়টিকে বলা হয় মায়োকার্ডাইটিস। মূলত মার্কিন প্রদেশে এটা সামনে আসছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়টিকে নিয়ে সেইভাবে কোনো গবেষণা হয়নি। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আশা করা যায় ২০-২৫ শতাংশ কোভিডজয়ীর ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে এই সমস্যা”, বলছিলেন টাকি রুরাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ তমোজিৎ গোস্বামী।

গবেষণা বলছে, কোভিড সংক্রমণের পর হৃদপিণ্ডের কোষ এবং কলায় তৈরি হচ্ছে ইনফ্ল্যামেশন। ফলে কোষগুলি ফুলে যাওয়ার জন্য প্রদাহ হচ্ছে। পরে সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হার্ট ফেলিয়োরও হচ্ছে। প্রশ্ন থেকে যায়, করোনা কি তবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে হৃদযন্ত্রকে?

আরও পড়ুন
এবার বাড়িতেই কোভিড টেস্ট, উঁকি দিচ্ছে তথ্যগোপনের আশঙ্কাও

তমোজিৎবাবু জানালেন, “কোভিড একেবারে নতুন একটা রোগ। এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে তাকে বুঝে ওঠা যায়নি। তবে হৃদযন্ত্রের সমস্যাগুলি দেখা দিচ্ছে মূলত ইমিউনোলজিক্যাল সমস্যা থেকেই। মানে, কোভিড পরবর্তী সময়ে আমাদের দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তারাই মাঝে মাঝে ঘাতকের ভূমিকা পালন করে। সিভিয়ার কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রেও এই সাইটোকাইন স্টর্ম তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডিগুলিই আসলে ক্ষতিগ্রস্ত করে হৃদযন্ত্রকে।”

আরও পড়ুন
গঙ্গাতীরে গণকবর, দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রতিফলন উত্তরপ্রদেশে?

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই তমোজিৎবাবু জানালেন, হৃদরোগে আক্রান্ত পোস্ট-কোভিড পেশেন্টের সংখ্যা বেড়েই চলেছে দিন দিন। আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরাও। তবে তাঁদের ক্ষেত্রে সেরে ওঠার প্রবণতাও অনেকটাই বেশি। যথাযথ মেডিকেশনে মাস দুয়েকের মধ্যেই সুস্থতায় ফিরছেন তাঁরা। তবে প্রাণনাশের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

আরও পড়ুন
মজবুত করতে হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, করোনা-মোকাবিলায় নিদান চিকিৎসকদের

তবে বাঁচার কোনোই কি উপায় নেই? না, পোস্ট-কোভিড কার্ডিও সমস্যা মানেই মৃত্যু নয় জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পরেই যেন ইসিজি করিয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রেসার, সুগার ও অন্যান্য সমস্যা থাকলে যেন রুটিন চেক-আপের মধ্যে রাখা হয় রোগীকে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোভিডের পরবর্তী তিন মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কোভিড পরবর্তী সময়ে দু’ থেকে তিন মাস সক্রিয় থাকে অ্যান্টিবডিগুলি। এই পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমেই একমাত্র এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে হৃদরোগের সম্ভাবনাকে…

Powered by Froala Editor

Latest News See More