শিথিল হয়ে এসেছে লকডাউন। আর তাই দূর প্রবাসের কর্মস্থল থেকে ফিরছেন অনেকেই। কিন্তু সংক্রমণ রুখতে কিছু সতর্কতা তো নিতেই হবে। ফিরে আসা মানুষদের জন্য তাই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের নিদান দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এতদূর অবধি সমস্তকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয়, যদি কোয়ারেন্টাইনে থাকার মতো ন্যূনতম বাসস্থান না মেলে। ঠিক এমন অবস্থাতেই পাঁচদিন ধরে আছেন জলপাইগুড়ি জেলার দুই ভাই। আট বর্গফুটের একটা ছোট ছাউনি, যার মধ্যে একজন মানুষের পক্ষেও শুয়ে থাকা সম্ভব নয়, সেখানেই দিন কাটাচ্ছেন দুই ভাই।
ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ি শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মালিভিটা গ্রামে। গ্রামের বাসিন্দা অমর বাহাদুর রাই মহামারীর সময় ছিলেন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তাঁর কর্মক্ষেত্রে। এরপর লকডাউন শিথিল হলে তিনি ফিরে আসেন। তাঁকে শিলিগুড়িতে নিতে এসেছিলেন ভাই জীবন রাই। কিন্তু গ্রামে ফিরতেই তাঁদের পথ আটকে দাঁড়ান অন্যান্য বাসিন্দারা। এই আতঙ্কের পরিস্থিতিতে তাঁদের গ্রামের ভিতরে ঢুকতে দিতে নারাজ তাঁরা। তাই বাধ্য হয়েই অদূরে বেলাকোবা বনভূমির কাছে তৈরি একটি ২৫ ফুট উঁচু এলিফ্যান্ট ওয়াচ টাওয়ারে আশ্রয় নেন দুই ভাই। গত ১০ জুন থেকে আছেন সেখানেই।
নিজের পরিবার এবং গ্রামবাসীদের সুরক্ষার বিষয়ে চিন্তিত দুই ভাইও। কিন্তু এমনভাবে অমানুষিক আশ্রয়ে থাকাও যে সম্ভব নয়। তাদের এই অবস্থার জন্য ক্ষুব্ধ পরিবারের অন্য সদস্যরা। তাঁদের দাবি, অমর বাহাদুরের ফিরে আসার আগেই সেই খবর জানানো হয়েছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু তার পরেও কোয়ারেন্টাইনের জন্য কোনো ব্যবস্থা করেননি তাঁরা। অন্যদিকে বেলাকোবা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত জানিয়েছেন, ওয়াচ টাওয়ার অধিগৃহীত থাকায় হাতিদের উপর নজরদারিতে বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মানবিক কারণেই তাঁদের বের করে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় পঞ্চায়েতে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে। তবে পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, অমর বাহাদুর ফিরবেন, এই সংবাদ তাঁদের জানানো হলেও তিনি যে ইতিমধ্যে ফিরে এসেছেন, সেকথা তিনি আদৌ জানেন না। এবার জানতে পারায় অবশ্যই পদক্ষেপ নেবেন।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৪০ বছর ধরে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন, এক আশ্চর্য রুশ পরিবারের কাহিনি