পেরিয়ে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। বাজারে চলে এসেছে ভ্যাকসিন। কিন্তু এতকিছুর পরেও বিন্দুমাত্র বদলাচ্ছে না পরিস্থিতি। বরং, সারা বিশ্বে জুড়েই বেড়ে চলেছে মহামারীর প্রকোপ। এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ কোটিরও বেশি মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০ লক্ষ। কিন্তু করোনার এই মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ যেন শাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। কোভিড-এর চরিত্র নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই আলোকপাত করা হচ্ছে অন্যান্য নানা রোগের উপসর্গগুলিতে। যা এতদিন নিছকই উপেক্ষা করে আসা হয়েছিল।
বিষয়টি ঠিক কেমন? সাধারণ একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। গন্ধ ও স্বাদ চলে যাওয়া কোভিডের অন্যতম একটি উপসর্গ। তবে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার কারণেই যে এমনটা হয়, তা নয়। ব্রঙ্কাইটিস এবং অনেকক্ষেত্রে সাধারণ ফ্লু-এর সময়ও দেখা যায় এই একই লক্ষণ। কিন্তু এর কারণ কী— সে ব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণা করা হয়নি কখনোই। স্বাভাবিক বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল বিষয়টিকে।
কোভিডের ভয়াবহতা এবং ব্যাপকতার কারণেই এখন নতুন করে বিস্তারিত গবেষণা হচ্ছে এই বিষয়গুলিতে। নতুন করে গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে শ্বাসকষ্টজনিত অন্যান্য রোগগুলি। ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস কিংবা টিউবারকিউলোসিসের সঙ্গে কোভিডের মিল রয়েছে যথেষ্ট। প্রতিক্ষেত্রেই প্রথমে আক্রান্ত হয় মানুষের ফুসফুস। দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। তবে তার প্রভাব পড়ে স্নায়ুতন্ত্র এবং হৃদযন্ত্রেও। সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, ফুসফুসের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধতে শুরু হয় হৃদযন্ত্রের প্রদাহ। যথেষ্ট চাপ তৈরি হয় স্নায়ু কোষের ওপরেও।
প্রতি বছর গোটা বিশ্বে শুধু ফ্লু-তে আক্রান্ত হন কয়েক মিলিয়ন মানুষ। তবে বিষয় হল, অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন এই ধরণের ফ্লু থেকে। দেখা যায় না মৃত্যু মিছিল। হৃদযন্ত্রের সমস্যা হলেও, তা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে ধরে নিয়ে উপেক্ষা করে যান অধিকাংশ রোগী ও চিকিৎসকই। তবে কোভিডের সংক্রামক চরিত্রের জন্যই এখন বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে এই বিষয়গুলিকে। আর তাতে আখেরে লাভ হচ্ছে অন্যান্য চিকিৎসাতে। এমনটাই জানাচ্ছেন কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ ব্রুস ম্যাকম্যানাস। ফলত ইনফ্লুয়েঞ্জা, হার্পস ভাইরাস এবং সাইটোমেগালভাইরাসেরও চিকিৎসাভিত্তিক গবেষণার কাজ অনেকটাই এগিয়ে থাকছে কোভিডের দৌলতে।
আরও পড়ুন
করোনাকালে গৃহহীন ইংল্যান্ডের ৭ লক্ষ পরিবার!
তবে ইতিপূর্বে গবেষণার এই গাফিলতির জন্য কেবলমাত্র গবেষক এবং চিকিৎসকদের দায়ী করা খানিকটা ভুলই হবে। কারণ, এই ধরণের গবেষণার জন্য প্রয়োজন হয় বড়ো অঙ্কের বিনিয়োগের। সেইসঙ্গে পরীক্ষা চালানোর জন্য দরকার হয় স্বেচ্ছাসেবকদেরও। সেই জায়গাগুলোতেও থেকে গিয়েছিল যথেষ্ট ফাঁক। একদিকে যেমন বড়ো কোনো সংস্থা এগিয়ে আসেনি, তেমনই রোগের চরিত্র ও কারণ অধ্যায়নের জন্য কেবলমাত্র ব্যবহৃত হত ফেরেট। যা আশাপ্রদ ফলাফল দিত না অনেক সময়ই। বর্তমানে কোভিডের গবেষণা এবং সেই সংক্রান্ত তথ্যই বড়ো হাতিয়ার হতে চলেছে গবেষকদের কাছে। যার ওপর ভিত্তি করেই সমাধান আসতে পারে অন্যান্য মারণ রোগের। যা এতদিন স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়েছি আমরা…
আরও পড়ুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় না মস্তিষ্ক, প্রমাণ দিলেন গবেষকরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ড্রপলেট নয়, করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত; জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা