একুশ শতকের ‘জাতক’ এই রাষ্ট্রগুলি, স্বাধীনতার অপেক্ষায় এখনও বহু দেশ

/৮

গত বছর ডিসেম্বর মাসের কথা। ব্রিটিশ শাসনের ইতি পড়েছিল বার্বাডোজে। বিশ্বের নবতম স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্রটি। সেটা ১৯৬৬ সাল। আজ থেকে প্রায় পঞ্চান্ন বছর আগেই স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল বার্বাডোজ। তবে দেশটির পৃথক প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, গভর্নর জেনারেল থাকলেও ২০২১ সাল পর্যন্ত খাতায়কলমে রাষ্ট্রপ্রধান বা হেড অফ দ্য স্টেট ছিলেন রানি এলিজাবেথ। সেই প্রশাসনিক পদের ইতি টেনেই গত বছর ‘পরাধীনতার গ্লানি’ মোছে বার্বাডোজ।

/৮

একুশ শতকে দাঁড়িয়েও পরাধীনতা কথাটা বেশ অবাক করে সকলকেই। তবে শুধু বার্বাডোজই নয়। চলতি শতকে, বার্বাডোজের মতোই স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে আরও বেশ কিছু দেশ। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের মানচিত্রে নব-সংযোজিত সেইসব স্বতন্ত্র রাষ্ট্রদের।

/৮

দক্ষিণ সুদান— কয়েকদিন আগে পর্যন্তও বিশ্বের নবতম দেশ হিসাবেই বিবেচিত হত দক্ষিণ সুদান। ২০১১ সালের ৯ জুলাই জন্ম হয় দক্ষিণ সুদানের। সুদান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। বছর দশেক আগে সেই দাবিকেই স্বীকৃতি দেয় সুদান সরকার। বর্তমানে আফ্রিকার সবথেকে বৈচিত্রময় দেশ এই ছোট্ট ভূখণ্ডটি। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০টিরও বেশি উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস দক্ষিণ সুদানে। তাছাড়াও রয়েছেন আরবিয়ান, খ্রিস্টান, ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা। তবে স্বতন্ত্র দেশের মর্যাদা পাওয়ার পরেও আজও শান্ত হয়নি দক্ষিণ সুদান। স্বাধীনতার এক বছর পর থেকেই ঘনিয়েছে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি।

/৮

কোসোভো— কোসোভো মূলত সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ। প্রায় এক শতাব্দীরও আগে থেকে শুরু হয়েছিল কোসোভোর সার্বভৌমত্বের লড়াই। সার্বিয়া অটোমান সাম্রাজ্য থেকে আলাদা হওয়ার পর থেকেই। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বার বার হাতবদল হয়েছে কোসোভোর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুগোস্লাভিয়ার অঙ্গরাজ্য হিসাবে মর্যাদা পায় কোসোভো। পায় স্বায়ত্বশাসনের অধিকারও। ২০০৬ সালে সার্বিয়ার জন্মের পর, এই দেশটিরই অংশ হয়ে ওঠে কোসোভো। তবে কোনোদিনই থিতিয়ে পরে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সার্বিয়া শিলমোহর চাপায় স্বাধীনতার সেই আবেদনে।

/৮

সার্বিয়া— প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার বিভাজনে জন্ম নেওয়া সাতটি দেশের মধ্যে অন্যতম সার্বিয়া। ২০০৬ সালে স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে সার্বিয়া। সার্বিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে উঠে আসবে কোসোভোর কথাও। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক সেটা। কোসোভো লিবারেশন আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় যুগস্লাভ সামরিক বাহিনী। ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেই সংঘর্ষে। ২০০৩ সালে যুগোস্লাভিয়া ও সার্বিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় একটি শান্তিচুক্তি। সেই চুক্তি অনুযায়ীই ২০০৬ সালে স্বাধীনতা পায় সার্বিয়া।

/৮

মন্টিনিগ্রো— সার্বিয়া এবং কোসোভোর মতো মন্টিনিগ্রোও ছিল যুগোস্লাভিয়ার অংশ। আয়তনে খুব ছোটো হলেও, সার্বিয়ার স্বাধীনতা আদায়ের আগে থেকেই যুগোস্লাভ-বিরোধী আন্দোলনের সময় পৃথক রাষ্ট্রের দাবিদার ছিল মন্টিনিগ্রো। ২০০১ সালে স্বায়ত্তশাসিত সার্বিয়ার মধ্যে থেকেও পৃথক স্বাধীনতাপন্থী শাসক জোট তৈরি করে ছোট্ট রাজ্যটি। ২০০৬ সালে চুক্তি অনুযায়ী সার্বিয়ার জন্মের পরই, ঐতিহাসিক গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে মন্টিনিগ্রো।

/৮

তিমুর-লেস্তে— দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নবতম দেশ তিমুর-লোস্তে। পূর্ব তিমুর হিসাবেও পরিচিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি। লেসার সুন্দা দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত আতাউরো, জ্যাকো এবং আম্বেনো ছিটমহল নিয়ে গঠিত ছোট্ট এই দেশটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তিমুর-লোস্তে ছিল জাপানের দখলে। পরবর্তীকালে জাপানের হারের পর দ্বীপটির শাসন ক্ষমতা আদায় করে পর্তুগিজরা। ১৯৭৫ সালে পর্তুগাল স্বাধীনতা প্রদান করলেও সুযোগ বুঝে দখলদারি নেয় ইন্দোনেশিয়া। ২০০২ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়াই চালক ছিল পূর্ব তিমুরের। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ১৯৯৯ সালে গণভোটের অনুমতি দেয় ইন্দোনেশিয়ার সরকার। প্রায় চার-পঞ্চমাংশ ভোটে নিশ্চিত হয়ে যায় দ্বীপটির ভাগ্য। সেই ফলাফল মেনেই ২০০২ সালের ২০ মে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পায় তিমুর-লোস্তে।

/৮

চলতি শতকে এখনও পর্যন্ত নতুন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে এই ছয় দেশ। তবে আরও লম্বা হতে পারে এই তালিকা। কেননা, স্বাধীনতার দাবিতে এখনও লড়াই করে চলেছে বিভিন্ন অঞ্চল। গ্রিনল্যান্ডের মতো দেশ যেমন আজও ডেনমার্কের অঘোষিত উপনিবেশ, তেমনই অঙ্গরাজ্য থেকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের মর্যাদার দাবি তুলেছে ওয়েস্ট পাপুয়া (ইন্দোনেশিয়া), সোমিল্যান্ড (সোমালিয়া), হংকং (চিন), বালুচিস্তান (পাকিস্তান), তিব্বতের (চিন) মতো অঞ্চল। সেই তালিকাও বেশ দীর্ঘ। ফলে, আগামী কয়েক দশকে এক দল নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই।

Powered by Froala Editor

More From Author See More