বছর দুয়েক আগে হলেও ওদের স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত। এমনকি আজও পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের আইনত অপরাধী বলে চিহ্নিত করা হবে। কিন্তু কোস্টারিকার মাটিতে স্বচ্ছন্দে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ব্যক্ত করতে। আলেকজান্দ্রা কুইরস এবং দুনিয়া আরায়া শুরু করতে চলেছেন তাঁদের দাম্পত্য জীবন। তবে এই সংসারটা একটু অন্যরকম। এখানে দুজনেই মহিলা। অর্থাৎ আমরা যাঁদের সমকামী বা সমপ্রেমী বলি, এঁরা তাই।
পৃথিবী ব্যাপী করোনা লকডাউনের মধ্যেই অন্য এক ইতিহাসের সাক্ষী থাকল কোস্টারিকা। মধ্য আমেরিকার প্রথম সমলিঙ্গের বিবাহ অনুষ্ঠান ঘটে গেল ২৬ মে তারিখে। লকডাউনের মধ্যেই দেশের মানুষ টিভির পর্দায় দেখলেন সেই বিবাহ অনুষ্ঠান। ঘরে বসেই অনেকে ছুঁড়ে দিলেন রামধনু রঙের গোলাপের পাপড়ি।
অন্য অনেক দেশের মতোই কোস্টারিকাতেও সমলিঙ্গের বিবাহ ছিল আইনত অপরাধ। কিন্তু লিঙ্গ সচেতনতা আন্দোলনের প্রভাবে সেখানেও ক্রমশ গড়ে ওঠে জনমত। মানুষ বুঝতে পারে, পুরুষে পুরুষে প্রেম বা নারীর সঙ্গে নারীর প্রেম কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। আসলে সবটাই প্রকৃতির নানা বিচিত্র খেয়ালের অংশ। আর তারপরেই ২০১৮ সালে সেদেশের সাংবিধানিক আদালত এই ধরনের বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়।
তবে আইনত স্বীকৃতির পরেও এই দুবছরে কেউ এগিয়ে আসেননি। সমপ্রেমীদের লড়াই তো শুধু আইনি লড়াই নয়। তাঁদের লড়তে হয় নিজের সমাজ, নিজের পরিবার এমনকি নিজের সঙ্গেও। আর এই লড়াইটা কখনোই খুব সহজ হয় না। কিন্তু মহামারী করোনার মধ্যেই সেই ইতিহাস তৈরি করলেন দুই মহিলা। কোস্টারিকাতে এমন ঘটনা প্রথম। অন্যান্য দেশেও তো এখনও খুব সহজ স্বাভাবিক বলে স্বীকৃত নয়।
দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশেই সমলিঙ্গের বিবাহ আইন স্বীকৃত। সেই তালিকাতেই যুক্ত হল কোস্টারিকার নাম। কিন্তু আইনি স্বীকৃতির পরেও ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ভেনেজুয়েলার মতো দেশে সমাজের বর্বর অত্যাচারের শিকার হতে হয় সমপ্রেমী মানুষদের। প্রতি বছর হত্যার ঘটনাও খুব কম ঘটে না। কোস্টারিকার ভবিষ্যত কী, তা সময় বলবে। তবে প্রথম সমলিঙ্গের বিবাহকে ঘিরে সেখানে সাধারণ মানুষের যে উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত রেখে যায়।
Powered by Froala Editor