পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে মহাজাগতিক বুদবুদ!

পৃথিবীর বাইরেও ছড়িয়ে রয়েছে এক অনন্ত জগৎ। রহস্যেমোড়া সেই ব্রহ্মাণ্ডের সিংহভাগই এখনও অধরা বিজ্ঞানের কাছে। অজানা তার সম্পূর্ণ ইতিহাসও। দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে প্রযুক্তি। তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু তার পরেও কতটুকুই বা ধরা পড়ছে আমাদের চোখে? এবার সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল তেমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পৃথিবী তো বটেই, প্রকাণ্ড এক মহাজাগতিক বুদবুদের (Cosmic Bubble) পেটের মধ্যে রয়েছে আমাদের আস্ত সৌরজগৎ!

এতদিন পর্যন্ত সৌরজগতের অবস্থান বলতে গেলে শরণাপন্ন হতে হত আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির। এবার তার আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যেতে পারে আকাশগঙ্গার ‘সুপারবাবল’ বুদবুদের মধ্যেই অবস্থিত সৌরজগৎ। শুধু সূর্যই নয়, ১০০০ আলোকবর্ষ প্রশস্ত মহাজাগতিক এই বুদবুদ জন্ম দিয়েছে কয়েক হাজার অপত্য নক্ষত্রেরও। 

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই বুদবুদ আদতে কী? আর তার জন্মই বা কীভাবে? মহাকাশ বলতে আমরা মূলত শূন্য মাধ্যমকেই বুঝি। কিন্তু সবসময় যে তা শূন্যস্থান, তেমনটা নয়। ভাসমান গ্যাসের মেঘ ছড়িয়ে রয়েছে আদিগন্ত এই ব্রহ্মাণ্ডজুড়ে। সেইরকম গ্যাসের মেঘ দিয়েই তৈরি ‘সুপারবাবল’ বুদবুদটি। কয়েক কোটি বছরের ব্যবধানে সবমিলিয়ে ১৫টি সুপারনোভা বা নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হয়েছে এই বুদবুদ। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই এই বুদবুদজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে নক্ষত্রের মূল জ্বালানি হাইড্রোজেন গ্যাস। 

১৯৭০ সালে প্রথম মহাজাগতিক বুদবুদের সন্ধান পান গবেষকরা। ‘লোকাল বাবল’ হিসাবে নামকরণ করা হয়েছিল সেটিকে। তবে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল তার সম্পর্কে একাধিক অজানা তথ্য। প্রথমত, বাবল বা বুদবুদ বলা হলেও এর আকৃতি চিরাচরিত গোলকাকার নয়। বরং, তা খানিকটা এলোমেলো ব্লবের আকৃতির। এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল তার আয়তন বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে প্রতি সেকেন্ডে ৬.৪ কিলোমিটার করে ব্যাস বাড়াচ্ছে এই অতিকায় বুদবুদ। 

আর সূর্য? এমন একটি বুদবুদের মধ্যে কীভাবে ঢুকে পড়ল আমাদের সমস্ত শক্তির উৎস? তার জন্মও কি ‘সুপারবাবল’-এ? না, খানিকটা অবাক করে দিয়েই গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই বুদবুদের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত নক্ষত্রেরই জন্ম হয়েছে তার বাইরে। পরবর্তীকালে তা ঘুরতে ঘুরতে প্রবেশ করেছে গ্যাসের এই বুদবুদের মধ্যে। আর নতুন নক্ষত্রের জন্মের তত্ত্ব? হ্যাঁ, সুপারবাবল কয়েক হাজার বেবি স্টার বা অপত্য নক্ষত্রের জন্ম দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তা মূলত তৈরি হয়েছে সুপারবাবলের বাইরের আস্তরণের গা ঘেঁষে। মহাকাশ বিজ্ঞানের ভাষায় যা পরিচিত ‘স্কিন’ নামে।

সম্প্রতি, নাসার গবেষকরা প্রস্তুত করে ফেলেছেন ‘সুপারবাবল’-এর থ্রিডি মডেল। তবে পৃথিবীকে ঘিরে থাকা এই মহাজাগতিক বুদবুদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য পেতে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন বলেই মনে করেন বিজ্ঞানীরা…

Powered by Froala Editor