এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের প্রবল ঝোঁক বিভিন্ন পাখির ছবি তোলার। কিন্তু কলকাতা এবং আশেপাশের শহরতলিতে পাখির বৈচিত্র্য কমে আসছে ক্রমশই। হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক প্রজাতি। কমেছে চড়াইয়ের সংখ্যা। ছাতারে, হলদে বুড়ি, নীলকণ্ঠ, বার্বেট মাছরাঙা, কাঠ-ঠোকরা এসব পাখির দেখা পাওয়াই ভাগ্যের ব্যাপার এই কংক্রিটের জঙ্গলে। পাখির ছবি তোলার নেশার জন্য অনেকেই তাই শীত পড়লে পাড়ি দেন অরণ্যে। সম্প্রতি ব্যারাকপুরের বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মীর আপলোড করা ভিডিও দেখলে, চমকে উঠবেন তাঁরা। এই লকডাউনেও একছুটে পৌঁছে যাওয়ার ইচ্ছে করবে ব্যারাকপুরে।
কলকাতার কেন্দ্র থেকে মাত্র তেইশ কিলোমিটার দূরের শহর ব্যারাকপুর। সেখানেই রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ভারতের জাতীয় পাখি। বিদ্যুৎ ভবনের ছাদে ময়ূর দেখতে পেয়ে তার ভিডিও করেন অফিসের এক কর্মচারী স্বপন হালদার। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে পড়ে ভিডিওটি। বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ সকলে। ময়ূর দেখে অবাক ব্যারাকপুরের বাসিন্দারাও। আগে কোনোদিন চোখে পড়েনি তাঁদেরও। এই অদ্ভুত ঘটনায় তাজ্জব বনে গেছেন তাঁরাও।
লকডাউনে দূষণ কমে গেছে। রাস্তাঘাটে গাড়ির আওয়াজ নেই, মানুষের হল্লা নেই কোনো। ক্যাকাফোনির বেড়াজাল থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়েছে শহর। তাই পশু, পাখিরা নির্বিঘ্নে বেরিয়ে আসছে গোপন আস্তানা থেকে। উপভোগ করছে স্নিগ্ধ পরিবেশ। এই লকডাউনে কোনো জায়গাতেই তাদের বাধা নেই আনাগোনায়।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, খোদ ব্যারাকপুরে ময়ূর এল কোথা থেকে? ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে লোকজনের মধ্যে। লাটবাগানের পুলিশ লাইনে ময়ূর ছিল বছর খানেক আগে অবধিও। এক পুলিশকর্মী চারটে ময়ূরের বাচ্চা নিয়ে এসেছিলেন সেখান থেকেই। কিন্তু বাঁচানো যায়নি দুটিকে। অন্য দুটির খবর জানা ছিল না কারোরই। সেই ময়ূর দুটিকেই কি দেখা যাচ্ছে এখন? নাকি অন্য কোথাও থেকে নিছকই ঘুরতে ঘুরতেই ব্যারাকপুরে হাজির হয়েছে? উত্তর অজানা। সঠিক ভাবে বলতে পারছেন না বন দফতরের কর্মীরাও।
বন দফতর অফিসে খবর যেতেই, আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে যান। দিব্যি বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াতে দেখেন দুটি ময়ূরকে। তবে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি ওই আধিকারিকেরা। বরং স্বাভাবিক ছন্দেই ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন তাদের। কোনোমতেই এই বন্যপাখিকে যাতে বিরক্ত করা না হয়, স্থানীয় মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন ফরেস্ট রেঞ্জের অফিসার শুভাশিস হালদার।
ব্যারাকপুরের রাস্তায় এখনও নিশ্চিতে হেঁটে বেড়াচ্ছে ময়ূররা। কখনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে, কখনো বিদ্যুৎ অফিসের ছাদে, কখনো বা আর্দালি বাজারের রাস্তাতেও দেখা যাচ্ছে তাদের। সম্প্রতি রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয়ের ক্লাসরুমেও দুটি ময়ূরকে বসে থাকতে দেখা গেছে। ব্যারাকপুরের সেনা ছাউনির ঠিক পিছন দিয়ে বয়ে গেছে গঙ্গা। গাছপালায় ঘেরা শান্ত নদীর ধার। সেই জায়গায় এখন স্থায়ী ডেরা হয়েছে ভারতের জাতীয় পাখির।
লকডাউন উঠলেই একবার ক্যামেরা হাতে ঢুঁ মেরে আসবেন নাকি সেখানে? অবিশ্বাস্য এই দৃশ্য একবার প্রত্যক্ষ না করলে, সত্যিই যে বড় মিস করা হবে!