সোশ্যাল মিডিয়া ও নেটে, বিভিন্ন খবরের পাতায় বেশ কয়েকদিন ধরেই কিছু গ্রাফ ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখলেই বোঝা যাবে, তুল্যমূল্য পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে সেখানে। লকডাউন শুরু করার পর করোনা সংক্রমণের হার কেমন ছিল, আর পরে কেমন হয়েছে— গ্রাফের বিষয় ছিল সেটাই। সেখানে একদিকে ছিল ইতালি, জার্মানি, স্পেনের মতো কিছু দেশ যারা করোনায় ভয়ংকর জর্জরিত ছিল; অন্যপাশে ছিল ভারত। লকডাউন শুরুর পর থেকে ওই দেশগুলোয় করোনা সংক্রমণ কমে এসেছিল অনেকটাই। গ্রাফও নামতে শুরু করেছিল। উল্টোদিকে ভারত? না, এখানে গ্রাফ নামেনি এক ফোঁটাও; বরং তরতরিয়ে বেড়েছে।
এই গ্রাফকে সামনে রেখেই ভারতে লকডাউনের পরিকল্পনার ওপর প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই তথ্য, সেই প্রশ্ন সঠিকও বটে। তার ওপর জুনের প্রথম দিন থেকে নিয়মকানুন শিথিল করে দেওয়ায় রাস্তায় জনসমাগম যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা। দিনের শেষে সাড়ে তিন লাখের অঙ্কের দিকে যেতে চলেছে ভারত। কিন্তু শুধু ভারতেই কি এমনটা হয়েছে? তা কিন্তু নয়। বিশ্বের আরও কিছু দেশে ক্রমশ বেড়ে চলেছে করোনার প্রকোপ। লকডাউন ঘোষণা করার পরও থামেনি মৃত্যু মিছিল।
এই দেশগুলোর মধ্যে প্রথমেই থাকবে আমেরিকা। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ, প্রথম বিশ্বের প্রতীক। কিন্তু সেখানে আজ কী পরিস্থিতি, নতুন করে বলে দিতে হবে না। অর্থ, লোকবল, স্বাস্থ্য পরিষেবা সবই আছে। তাও প্রায় শ্মশানের অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আর এর জন্য অনেকেই দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। লকডাউন শুরু করতে অনেকটা সময় নিয়েছেন তিনি, আর এখন সেটা তুলেও দিতে চাইছেন। কিন্তু আমেরিকার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। আপাতত দোষারোপেই ব্যস্ত তিনি; চিকিৎসকরা লড়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি। আর আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যেই করোনা মুহুর্মুহু থাবা বসাচ্ছে।
ব্রিটেনের কথাও এখানে বলা আবশ্যিক। যদিও গ্রাফের হিসেবে লকডাউন শুরু হওয়ার সময় থেকে এখন বেশ কমে এসেছে সংখ্যা; কিন্তু এখনও মুক্ত হয়নি। এখনও প্রতিদিন নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখানে হাজারের ওপর। এদিকে বেশ কিছু জায়গা খোলার পরিকল্পনা করছেন ব্রিটিশ প্রশাসন। লকডাউনের নিয়মও অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। সেখানে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটেন, কী করতে চলেছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সেখানকার নাগরিকরা।
আরও পড়ুন
আবার লকডাউন চিনের একাংশে, রাজধানী বেজিংয়ে ফিরল সংক্রমণ
এর পাশাপাশি উঠে আসছে আরও দুটি দেশের প্রসঙ্গ। ব্রাজিল এবং পেরু। ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জর বোলসোনারোর একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে ব্রাজিলের জনগণের ওপর। প্রথমত, লকডাউন ঘোষণা করতেই অনেকটা সময় লাগিয়েছেন। যখন ‘বাধ্য হয়ে’ ঘোষণা করলেন, ততদিনে সংক্রমণ অত্যন্ত কঠিন জায়গায় যেতে শুরু করেছে। তার প্রশাসনের ওপর তথ্য গোপনের অভিযোগও উঠেছে। এই মুহূর্তে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বেড়েই চলেছে করোনা আক্রমণের সংখ্যা। প্রায় একই অবস্থা পেরুর। নতুন করে তালিকায় উঠে এসেছে এই দেশটি। এমনকি নতুন হটস্পট হিসেবেও কেউ কেউ চিহ্নিত করছে। সব মিলিয়ে, ভারত তো বটেই; এই দেশগুলোও নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। একই চিত্র তো আমরা আমাদের চারপাশেও দেখছি। প্রতিদিন নতুন করে বাড়ছে করোনার প্রকোপ, শক্তিশালী হচ্ছে ভাইরাস। ব্যবস্থা না নিলে, আরও ভয়ংকর বিপদ নেমে আসতে চলেছে…
আরও পড়ুন
লকডাউনের ফলাফল, ৪০ কোটি মানুষ ছাড়িয়ে গেছেন চরম দারিদ্র্যসীমাও!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শিশুশ্রমিকদের নিয়ে তৈরি স্কুল, লকডাউনের দীর্ঘ ছুটিতে কেমন আছে তারা?