একদিকে প্রতিষেধকের প্রভাবে করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক কিছুটা কমে আসছিল। আর তার মধ্যেই করোনা ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট এসে পরিস্থিতি আবার জটিল করে তুলছে। নতুন নতুন এইসব প্রজাতির সঙ্গে কি আদৌ লড়াই করতে পারবে পুরনো প্রতিষেধক? ভ্যাকসিন নিয়ে ঠিক কতটা ফল পাওয়া যাবে? এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের মনে। আর এইসব দুশ্চিন্তার মধ্যেই অনেক সময় ভুয়ো খবরও প্রচারিত হচ্ছে। মানুষকে গুজবে কান না দিয়ে তাই যথাযথভাবে প্রতিষেধক নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
দ্বিতীয় তরঙ্গে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়া করোনা ভ্যারিয়েন্টটি হল বি.১.১.৭। ব্রিটেনে প্রথম যার হদিশ মেলে। এরপর অন্তত ১১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভ্যারিয়েন্ট। শুধু এই একটিই নয়, অন্তত কয়েক ডজন নতুন করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা। মার্কিন ভাইরোলজিস্ট ডঃ এরিক পুলের মতে, সমস্ত প্রজাতি যে আগের চেয়ে বেশি সংক্রামক তা নয়। তবে এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে যে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে, তারা আরও বিপজ্জনক। এদের ক্ষেত্রে প্রতিষেধকের কার্যকারিতা অনেক কম হওয়াই স্বাভাবিক। তবু কোনো প্রতিষেধকের কর্মক্ষমতা শূন্য হতে পারে না বলেই মত চিকিৎসকদের। তাই নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কাজ করবে না, এরকম ধারণা একেবারেই ঠিক নয়।
যদিও নতুন এইসব প্রজাতির বিরুদ্ধে কোন প্রতিষেধক কতটা কার্যকর, তা নিয়ে এখনও কোনো পরিপূর্ণ সমীক্ষা হয়নি। সাধারণ রোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অ্যান্টনি ফাউসি অবশ্য ইতিমধ্যে নানা হাসপাতালের রিপোর্টের ভিত্তিতে একটি পরিসংখ্যান তৈরির চেষ্টা করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে যে সমস্ত ভ্যাকসিন পুরনো প্রজাতির ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছিল, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে তাদের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশের কম। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতিটির ক্ষেত্রে কার্যকারিতা ৬৫ শতাংশের কাছাকাছি। তাই ভ্যাকসিন নিলেই নিশ্চিন্ত, এমন ধারণা সত্যিই ঠিক নয়। ভাইরাসের বিরুদ্ধে এত তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ কার্যকর প্রতিষেধক তৈরি সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এখনও একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু ভ্যাকসিনকে না বলা সম্ভব নয়। যতরকমভাবে ভাইরাসের শক্তিবৃদ্ধি আটকানো যায়, ততই মঙ্গল।
Powered by Froala Editor