মহামারী করোনা এদেশে ৬ মাসের উপর শাসন করে এখনও তার আধিপত্য বজায় রেখে চলেছে। শুধু তাই নয়, ক্রমশ তার রাজত্বের পরিসীমাও বাড়ছে। শহরাঞ্চলের সীমানা ছাড়িয়ে ক্রমশ গ্রামের দিকে এগিয়ে চলেছে করোনার বিজয়রথ। অন্তত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে তেমনটাই দেখা যাচ্ছে। আর স্বাভাবিকভাবেই গ্রামাঞ্চলে ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক আরও বেশি করে জমা হচ্ছে।
মার্চ মাসের শুরু থেকে যখন দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে তখন অবশ্য সংক্রমণের কেন্দ্রে ছিল বড় শহরগুলিই। গ্রামাঞ্চলে প্রায় ভাইরাসের ভয় ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ যে খাতে এগোতে থাকে, তাতে দেখা যায় পুরো ছবিটাই ক্রমশ উলটে যাচ্ছে। দেশের দবথেকে জনবহুল শহরগুলির দিকে তাকালে দেখতে পাব সেখানে দৈনিক সংক্রমণের হার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিম্নমুখী। অবশ্য মুম্বই, দিল্লি বা কলকাতার মতো শহরে সংখ্যাটা না কমলেও খুব বেশি বাড়ার সুযোগ আর পাচ্ছে না। কিন্তু মোট সংখ্যার হিসাবে তার ধারেকাছে পৌঁছতে না পারলেও গ্রামেগঞ্জে কিন্তু প্রতিদিনের সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এভাবে ভাইরাস ছড়াতে শুরু করলে আক্রান্তের শতকরা সংখ্যার বিচারে শহর আর গ্রামের ব্যবধান মুছে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।
ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর বা আলিগড়ের মতো ছোটো শহর বা তার আশেপাশের দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা হাজার ছুঁইছুঁই। উত্তরবঙ্গেও করোনার প্রভাব বাড়ছে। আর হরিয়ানার কর্নালা জেলার খবর তো রীতিমতো সামাজিক মাধ্যমে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছ। আর তাই প্রশাসনের কপালেও ভাঁজ দেখা দিয়েছে। অনেকে দায়ী করছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের অপরিকল্পিতভাবে ফেরত আনার সিদ্ধান্তে। কেউ আবার দায়ী করছেন গ্রামবাসীদের সচেতনতার অভাবকেই।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের নগর অর্থনীতি প্রথমেই ভেঙে পড়েছে। গ্রামীন অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে কোনোরকমে চলেছে। এতে জিডিপি-র ৩০ শতাংশেরও কম আয় হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই গ্রামাঞ্চলে করোনার প্রকোপ সেই সামান্য সংস্থানটুকুকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে। পাশাপাশি আতঙ্ক দানা বাঁধছে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়েও। শহরাঞ্চলে হাতের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার পরেও অনেক ক্ষেত্রেই উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। সেখানে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা তো বড়োই সঙ্গিন। এর মধ্যে সচেতনতার অভাবও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজও গ্রামের মানুষের কাছে উপযুক্ত প্রচার নিয়ে যেতে পারেনি সরকার এবং অন্যান্য সামাজিক সংগঠন। কেউ কেউ ভাবছেন দেবতার অভিশাপ, কারোর কাছে আবার অপদেবতার প্রকোপ। এই অবস্থায় শারীরিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োগ যথাযথভাবে হওয়া অসম্ভব। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ মনে করছেন যে গ্রামাঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে পড়লে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবে যে সেই প্রকোপ শুরু হয়ে গিয়েছে। এর ভবিষ্যৎ কী, সেকথা সময়ই বলবে।
আরও পড়ুন
করোনা ও লকডাউনের আবহে, রাজ্যের কৃষিব্যবস্থার হাল ঠিক কেমন?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনার আবহে দিল্লিতে স্থগিত মহরমের শোভাযাত্রা, ৭০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম