সূর্যের করোনার মানচিত্র তৈরি করলেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী

মহামারী করোনা পরিস্থিতিতেই তৈরি হল সূর্যের করোনার মানচিত্র। না, আঁতকে ওঠার কোনো কারণ নেই, ভাইরাস করোনা সূর্য পর্যন্ত হানা দেয়নি। এই করোনা আসলে সূর্যের আবহমণ্ডল, মানে আমাদের বায়ুমণ্ডলের মতো। এখান থেকেই সৌরঝড়, সৌরঝলক অথবা সোলার মাস ইজেকশনের মতো দুর্যোগ পৃথিবীতে এসে আছড়ে পড়ে। শুধুই পৃথিবীতে নয়, কিন্তু অন্যত্র সেই দুর্যোগ বোঝার মতো জীবন নেই। তবে এবার থেকে এইসমস্ত দুর্যোগ আসার আগেই টের পাবেন বিজ্ঞানীরা। আর এই সাফল্যের সৌজন্যে দুই বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণা। করোনার এই মানচিত্র থেকেই পাওয়া যাবে আগামী দুর্যোগের পূর্বাভাস।

প্রায় এক শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করে থেকেছেন করোনার একটি স্পষ্ট মানচিত্রের। কিন্তু সেই কাজ তো সহজ নয়। সৌরপৃষ্ঠের প্রবল উষ্ণতা আর আলোর বিকিরণের জন্য করোনার অস্তিত্ব বোঝাই প্রায় অসম্ভব। কেবল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় তার অস্তিত্ব বোঝা যায়। আর অন্য সময় দেখতে হলে চোখ রাখতে হয় করোনাগ্রাফ যন্ত্রে। এই যন্ত্র কৃত্রিম উপায়ে সৌরপৃষ্ঠকে ঢেকে রাখে। কিন্তু তারপরেও করোনার সুস্পষ্ট চেহারা এতদিন বুঝতে পারেননি কেউই।

পৃথিবীর আবহমণ্ডলের মতোই সূর্যের করোনাকে ঘিরে রাখে তার চৌম্বকক্ষেত্র। সূর্যের শরীরে পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকেই সেই চৌম্বকক্ষেত্র ছড়িয়ে পড়ে। আর এর মধ্যে দুই বিপরীত মেরুর চৌম্বকক্ষেত্র পরস্পরের সংস্পর্শে এলেই আলোড়নের সৃষ্টি হয়। আর তারপরেই সূর্যের ঝড় এগিয়ে আসে গ্রহদের দিকে। এই ঝড়ের পূর্বাভাস পেতে হলে সেই চৌম্বকক্ষেত্রকে বুঝতে হবে। আর এই কাজটাই এতদিন প্রায় অসম্ভব বলে বিবেচিত হত। বাঁকুড়ার বাঁশি গ্রামের বিদ্যাবিনয় কারক আর হুগলির পশ্চিমপাড়ার তন্ময় সামন্ত সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে তুলেছেন।

রামানুজন ফেলো বিদ্যাবিনয় কারক আর আমেরিকার জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক তন্ময় সামন্ত একসঙ্গে এই কাজটি করেছেন। আর তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জিয়াও ইয়াং আর তাঁদের গবেষণা তত্ত্বাবধান করেছেন বিজ্ঞানী হুই টিয়ান। কিন্তু কীভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন তাঁরা? সূর্যের মধ্যে পরপর জন্ম নেওয়া শক্তিতরঙ্গকে পর্যবেক্ষণের কাজটি করেছেন বিদ্যাবিনয়। আর তন্ময় সামন্ত সেই তথ্য বিশ্লেষণের জন্য তৈরি করেছেন প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার। আর এভাবেই করোনাল সিসমোলজি প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হল মানচিত্র। প্রায় সম্পূর্ণ করোনার চেহারাই তুলে ধরেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
সৌরজগতের কেন্দ্র আসলে শূন্য, সূর্য ঘোরে তার চতুর্দিকে!

দুই বাঙালি বিজ্ঞানীর এই আবিস্কার আগামী দিনে মহকাশ গবেষণায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। আর্যভট্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব অবজারভেশনাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, এ এক অভূতপূর্ব সাফল্য। আর এই সাফল্যের কাহিনি যে বিজ্ঞানের রঙ্গমঞ্চে বাঙালির মর্যাদা আরও অনেকটাই বাড়িয়ে দিল, সেকথা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন
থামিয়ে দিতে পারে যুদ্ধ, কাড়তে পারে শাসকের প্রাণ; সূর্যগ্রহণ ঘিরে কিংবদন্তি যুগে যুগে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘লকডাউন’ চলছে খোদ সূর্যেও, আসন্ন বিপর্যয়ের কথা জানালেন বিজ্ঞানীরা