বিঘের পর বিঘে জমি জুড়ে শুধু বেগুনি ফুলের জোয়ার। এমনটা দৃশ্যই দেখা যায় কাশ্মীরের পুলওয়ামা উপত্যকার পম্পোর অঞ্চলে। আসলে এই ক্ষেতই কাশ্মীরের কৃষকদের কাছে স্বর্ণখনি। এই ফুল থেকেই তৈরি হয় বিশ্বের সবথেকে দামি মশলা জাফরান। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনই বর্তমানে ডেকে এনেছে কৃষকদের বিপত্তি। গত দুই দশকে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে কাশ্মীর উপত্যকায় জাফরানের উৎপাদন।
দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর ধরে চলে আসছে কাশ্মীরে জাফরানের চাষ। কিন্তু এমন ঘটনা শুধুমাত্র সাম্প্রতিক সময়েই লক্ষ্য করছেন কৃষকরা। প্রথমত উষ্ণায়নের কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে বৃষ্টিপাত। সেইসঙ্গে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে হিমালয়ের হিমবাহগুলি। ফলে কমছে পাহাড়ি নদী এবং ঝর্ণাগুলির জলের পরিমাণও। আর এই শুষ্কতার ফলাফল হিসাবেই দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে ‘মশলার রাজা’।
জাফরান ক্ষেতের পরিমাণ দেখে বিপুল উৎপাদনের কথাই মাথায় আসবে এক বাক্যে। কিন্তু আসল ঘটনা একেবারেই ভিন্ন। হিসেব মতো ১ কেজি জাফরান তৈরিতে দরকার পড়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ফুলের। সেইসঙ্গে মিশে অমানসিক পরিশ্রমও। সে-কারণেই স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি জাফরানের দাম দাঁড়ায় প্রায় ১৩৫০ ডলার।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ২০১৮ সালে প্রতি হেক্টর জমিতে কাশ্মীরে উৎপাদিত জাফরানের পরিমাণ ১.৪ কেজি। যা পুরোপুরি অর্ধেক ১৯৯৮ সালের রেকর্ডের। তবে শুধুই জলবায়ু পরিবর্তন নয়, তার সঙ্গেই এই বছর হাত মিলিয়েছে মহামারী পরিস্থিতি। যার কারণে আরও তলানিতে এসে ঠেকেছে জাফরানের উৎপাদন। কোথাও কোথাও তা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৫ শতাংশে।
আরও পড়ুন
দেশের মোড়ল-কে দেখতে আসা, ‘সাধারণ’ লেনিনকে চিনতে পারল না চাষিরা
২০১০ সালে, ভারত সরকার জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করতে এবং আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি প্রবর্তনের জন্য ৫.৪ কোটি মার্কিক ডলার বিনিয়োগ করে কাশ্মীরে। কর্তৃপক্ষের দাবি, ৩৭০০ একর জাফরান ক্ষেতকে তা নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছে। কিন্তু বাস্তবে সত্যিই কি রোখা গেছে আবহাওয়া পরিবর্তনকে? থেকেই যাচ্ছে সেই প্রশ্ন। পাশাপাশি কৃষকরা জানাচ্ছেন চলতি বছরে শুষ্কতা কাটাতে সরকার ডিপিং পদ্ধতির সেচের ব্যবস্থা করলেও, সেই প্রযুক্তি কৃষকদের হাতে এসে পৌঁছাতে সময় লেগে যায় অনেকটাই। ফলে অপেক্ষা করতে করতে বীজবপনেও নষ্ট হয়েছে অনেকটা সময়।
আরও পড়ুন
সংক্রান্তির দিনে, ঋণে জর্জরিত চাষিদের বড়শিতে গেঁথে ঘোরানো হত চড়কের গাছে
পৃথিবীর ৯০ শতাংশ জাফরানই সরবরাহ করে ইরান। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বের বাজারে ভারতে তৈরি জাফরানের রয়েছে আলাদা কদর। তার সুগন্ধ এবং গাঢ় লাল রঙের জন্য। কাজেই বিশ্বে ভারত থেকে রপ্তানিকৃত জাফরানই বিক্রি হয় সর্বোচ্চ দরে। সেখান থেকে সরকারেরও লাভ হয় বিপুল পরিমাণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যবস্থাগ্রহণে সরকারের ঔদাসীন্যই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের। তবে কৃষকদের মতে,এখনও শেষ হয়ে যায়নি সবকিছু। ফলে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে তাও খানিকটা রক্ষা করা যাবে পরিবেশকে। বাঁচিয়ে তোলা যাবে জাফরানের চাষ। কিন্তু তাঁদের সাহায্যে কতটা এগিয়ে আসবে প্রশাসন, সে ব্যাপারে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে কৃষকদের...
আরও পড়ুন
চাষের পদ্ধতি শেখাতে ক্যামেরা হাতে তুলে নিলেন মহিলা চাষিরা
Powered by Froala Editor