প্রবল দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে যামিনী। ছত্তিশগড়ের অম্বিকাপুর এলাকার আমদাড়া গ্রামের যামিনী এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। তার জন্য প্রস্তুতির কোনো ফাঁকি নেই। কিন্তু এর মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি এসে যেন সব লণ্ডভণ্ড করে দিল। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা করতে গেলে অনলাইন ক্লাস করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু যামিনীর কাছে তো স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ কিছুই নেই। তাহলে?
যামিনীর হাতে ঠিক তখনই একটা স্মার্টফোন তুলে দিলেন তার ভাই আনন্দ নাগেসিয়া। ১৫ বছর কারাবাস সেরে সম্প্রতি ফিরে এসেছেন তিনি। তিনি স্মার্টফোন কেনার টাকা পেলেন কোথায়? প্রশ্ন করতেই উত্তর মিলল। জেলে যে ১৫ বছর ছিলেন নাগেসিয়া, সেই সময় নানা ধরনের কাজ করতে হত তাঁকে। সেসবের জন্য পারিশ্রমিকও পেতেন। আর সেই পারিশ্রমিকের টাকা থেকেই বোনের জন্য স্মার্টফোন কিনেছেন তিনি।
২০০৫ সালে নিজের কাকার সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে তাঁকে খুন করে ফেলেন আনন্দ। যদিও সেটা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত ছিল, কিন্তু বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন নাগেসিয়া। ১৫ বছর ধরে জেলেই ছিলেন নাগেসিয়া। তবে জেলখানায় ভদ্র ব্যবহারের জন্য সম্প্রতি তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন জেলের সুপার রাজেন্দ্র গাইকড়।
আনন্দ যখন জেলে গিয়েছিলেন, যামিনীর বয়স তখন বড়োজোর বছর খানেক। এই ১৫ বছর তার জন্য কিছুই করতে পারেননি আনন্দ। তবে জেল থেকে ফিরেই বোনের জন্য কিছু করতে পেরে স্বাভাবিকভাবেই খুশি আনন্দ। আনন্দের কথায়, তাঁর বোন বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করতে চায় সে। কিন্তু ডাক্তারি পড়ার খরচ জোগার করা কি সম্ভব? আনন্দ জানিয়েছেন, বোনের স্বপ্ন পূরণের সামনে কোনোকিছুকেই বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেবেন না তিনি। পরিশ্রম করে জোগাড় করবেন পড়াশোনার খরচ। এই দুর্দশার সময়েও এমন ঘটনাই নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে শেখায়।
আরও পড়ুন
অনলাইন ক্লাসের জন্য ৮০০ পড়ুয়াকে স্মার্টফোন দেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অনলাইন ক্লাসে অপারগ, লকডাউনে পড়াশোনা ছেড়েছে দেশের ৪৩ লক্ষ প্রতিবন্ধী পড়ুয়া