অর্থনীতির হাল ফেরাতে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’, বিরোধিতা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র

প্রায় বিশ্বব্যাপী লকডাউনের পর অবশেষে মুক্তির দিশা দেখাচ্ছে ভ্যাকসিন। করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন উদ্বেগ বাড়ালেও প্রতিষেধকের প্রয়োগ অনেকটা নিশ্চিন্ত করেছে। আর এই সময়ে নতুন করে আন্তর্জাতিক পর্যটন শুরু করার পরিকল্পনা করছে প্রতিটি দেশ। তবে প্রতিষেধক না নিলে সীমান্ত পেরনো সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে সকলে। আর এই পরিস্থিতিতেই পাসপোর্ট অথরিটিগুলিকে বিশেষ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট তৈরির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তবে তা কতদূর কার্যকর হবে, তাই নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক।

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট তৈরির বিরোধিতা করে। প্রথমত, এখনও পর্যন্ত এমন কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি যা ১০০ শতাংশ কার্যকর। ফলে শুধুমাত্র ভ্যাকসিন নিলেই কাউকে সংক্রমণের বিষয়ে নিরাপদ বলে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আরও একটি মৌলিক বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার রিপোর্ট জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে পৃথিবীর ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ প্রতিষেধক পেয়েছেন। তবে তার বেশিরভাগটাই সীমাবদ্ধ ধনী দেশগুলির মধ্যে। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলির বেশিরভাগ মানুষ প্রতিষেধক পাননি। কোথাও কোথাও ১ শতাংশেরও কম মানুষ প্রতিষেধক পেয়েছেন। এই অবস্থায় প্রতিষেধকের উপর নির্ভর করে কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করলে উন্নত দেশগুলি অনেক বেশি সুবিধা পাবে। আর তার ফলে পৃথিবীব্যাপী বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠবে।

ইতিমধ্যে অবশ্য ইংল্যান্ড এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বেশ কিছু দেশে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। ইজরায়েল সরকারও ভ্যাকসিন পাসপোর্ট তৈরির জন্য বিশেষ কমিটি সুপারিশ করেছে। এসবের অনেক আগেই একই পথে হেঁটেছে সৌদি আরব সরকার। অবশ্য বাণিজ্যিক বা পর্যটনের কারণে সীমান্ত খুলতে রাজি নয় সৌদি আরব। তবে আর কিছুদিনের মধ্যেই মক্কায় হজ করতে হাজির হবেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান। এক্ষেত্রে সীমান্ত না খুললে তা মানুষের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করতে পারে। তবে প্রতিষেধক ছাড়া কেউ হজে যেতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সৌদি সরকার।

এর মধ্যেই আবার মার্কিন সরকার রীতিমতো চিন্তিত বিষয়টি নিয়ে। বাইডেন জানিয়েছেন, দ্রুত সীমান্ত খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান তিনি। কিন্তু তা যেন এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না করে, যা দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলিকে আরও বেশি পিছিয়ে দেবে। যদিও সমস্যাটা শুধুই অর্থনৈতিক নয়। বেশ খানিকটা সামাজিক। যেমন জাপানের অনেকেই প্রতিষেধক নিতে রাজি নন। জাপান সরকারও বিষয়টি ব্যক্তিগত পছন্দের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি এও জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতিষেধক নেওয়া বা না নেওয়ার উপর কোনো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। তবে সব মিলিয়ে ভারত সরকার এখনও কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।

আরও পড়ুন
করোনাবিধি না-মানায় শাস্তি, নিজের প্রশাসনকেই জরিমানা দিলেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী

ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন পাসপোর্টের প্রভাব খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছে ভারত সরকার। পাশাপাশি আইসিএমআর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, কোনোভাবেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অগ্রাহ্য করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতি এখনও প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভ্যাকসিন পাসপোর্ট কি আদৌ দীর্ঘ অর্থনৈতিক অচলাবস্থার কোনো সমাধান করতে পারবে?

আরও পড়ুন
টিকা নিলেই নিশ্চিন্ত নয়, আবারও ঘটতে পারে করোনা সংক্রমণ

Powered by Froala Editor

Latest News See More