কোনো অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা আদৌ উচিত কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে বহু যুগ ধরেই। কোনো কোনো দেশে মৃত্যুদণ্ডের (Execution) প্রথা বেশ নিষ্ঠুরও। বিশেষত আরবের দেশগুলিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যন্ত্রণা দিয়ে তিলে তিলে মারা হয় অপরাধীকে। এবার সেই পথেই হাঁটছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) মতো দেশ? অভিযোগ তেমনটাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য ওকলাহোমার সিদ্ধান্ত ঘিরেই জন্ম নিয়েছে এই বিতর্ক।
সম্প্রতি ওকলাহোমার (Oklahoma) বিচার ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে প্রতি মাসে একজন বন্দি তথা অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে চলতি মাস থেকে। আগামী ২৫ আগস্ট হত্যাকারী জেমস কোডিংটনের মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে দিয়েই শুরু হতে চলেছে এই ধারাবাহিক ‘হত্যালীলা’। ২০২৪ সালের মধ্যে অর্থাৎ, আগামী দু-বছরে ২৫ জন বন্দিকে এভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ওকলাহোমা প্রশাসনের।
তবে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়নি সম্প্রতি। বেশ কয়েক বছর আগেই মীমাংসা হয়ে গিয়েছিল সংশ্লিষ্ট মামলাগুলির। কিন্তু কীভাবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হবে, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা ছিল এতদিন। ভারতে যেমন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় অপরাধীদের, তেমনই যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত হাঁটে ইলেকট্রোকিউশনের পথে। কিন্তু সেই রীতিতে বদল এনে বিষাক্ত ইঞ্জেকশনের প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ডের কথা ঘোষণা করেছে ওকলাহোমা প্রশাসন। আর বিতর্ক সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরেই।
এই প্রথম নয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রে বিষাক্ত ইঞ্জেকশনের প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েকজন অপরাধীকে। তবে সেখানেও বর্বরতার ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। ২০১৪ সালে বন্দি ক্লেটন লকেটকে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল এই ওকলাহোমাতেই। তারপর প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করেছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে আর্তনাদ। অবশেষে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। কয়েক মাস পরে আমেরিকার আরও এক রাজ্যে চার্লস ওয়ার্নার নামে আরও এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় একইভাবে। তিনিও যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। সারা শরীরে দেখা গিয়েছিল খিঁচুনি। যন্ত্রণায় অনর্গল বমিও করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন
বিদেশি সিনেমা দেখলেই মৃত্যুদণ্ড! স্বৈরাচারের জাঁতাকলে উত্তর কোরিয়া
ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন সমালোচকরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনে উল্লেখিত হয়েছে, নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে শাস্তি দেওয়া কার্যত নিষিদ্ধ। মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রেও অপরাধীরা যাতে দীর্ঘস্থায়ী গুরুতর যন্ত্রণার ঝুঁকিতে না পড়েন, সে ব্যাপারেও নজর রাখতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে। ওকলাহোমার নয়া সিদ্ধান্তে গণ হারে অবলঙ্ঘন করা হবে সেই নীতির। যা সম্পূর্ণভাবে অন্যায্য। সমালোচকদের দাবি এই ঘটনা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে বিশ্বযুদ্ধে বিষাক্ত পদার্থ ও গ্যাস চেম্বারে মানুষ হত্যার কথাই। যা গণতান্ত্রিক দেশে সভ্য সমাজের অংশ হতে পারে না কোনোভাবেই।
আরও পড়ুন
ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড, সাউথ ক্যারোলিনার খসড়া আইনে বিতর্ক...
অবশ্য এই অভিযোগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো হেলদোল নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যটির। আগামী ২৫ তারিখ থেকে ধারাবাহিক মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত একপ্রকার অনড় ওকলাহোমা সরকার। ২০১৬ সালের গণ-ভোটের কথাই তুলে আনছে সেখানকার প্রশাসন। সে-বছর গণ-ভোটের মাধ্যমেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাতিল করে মৃত্যুদণ্ডকে বেছে নেন ওকলাহোমার মানুষ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে দায়ের হয়েছে এই সংক্রান্ত একাধিক জনস্বার্থ মামলা। অবশ্য সেই মামলার নিষ্পত্তি হতে ন্যূনতম ৬০ দিন সময় লাগবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তবে কি ততদিন পর্যন্ত এই বর্বরোচিত পদ্ধতিতেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে অপরাধীদের? জানা নেই উত্তর…
আরও পড়ুন
মহামারীতেও অব্যাহত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ, শীর্ষে মধ্যপ্রাচ্য
Powered by Froala Editor