“ব্যক্তিগত শোক আমাদের মুহ্যমান করে। আর যখন বিপুল পরিমাণে লোকক্ষয় হয়, তখন একটা শোক হয় বটে, তার সঙ্গে একটা ভয়ও আসে… মৃত্যুর যে করাল চেহারাটা আছে, বিশাল-বিপুল চেহারাটা আছে, সেটা আমরা সহ্য করতে পারি না।”
বলছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। মহামারীর এই ভয়াবহ সময়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Alapan Bandyopadhyay) গ্রন্থ ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু… তবু অনন্ত জাগে’-র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বার বার ফিরে ফিরে আসছিল এই ‘গণ-মৃত্যু’ এবং মৃত্যুশোকের কথা। তার বিভিন্ন স্তরের কথা।
আজ গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের (Gayatri Chakravorty Spivak ) জন্মদিন। আর এই বিশেষ দিনটিই সাক্ষী থাকল এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের। ‘অনুষ্টুপ’-এর উদ্যোগে নন্দন ৩-এ আয়োজিত হল এক মনোগ্রাহী সান্ধ্যানুষ্ঠান। প্রকাশিত হল গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের প্রথম বাংলা গ্রন্থ ‘অপর : লেখা ও কথার সংকলন’ এবং আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু… তবু অনন্ত জাগে’ গ্রন্থটি। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিন্দম চক্রবর্তী, শুভাপ্রসন্ন এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচারের দায়িত্বে ছিলাম আমরা, প্রহর।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও উঠে আসছিল এই সময়ের ছবিই। গত বছর মহামারীতে প্রয়াত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক তথা তাঁর ভাই অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। চলে গিয়েছিলেন তাঁর একাধিক নিকটজন। অথচ, এই ব্যক্তিগত শোকের পর্দা সরিয়েও, তাঁকে পালন করে যেতে হয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ। মহামারীর সময়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুও কি আরেক ধরনের বিহ্বলতা নয়? শৈশব, কৈশোরের স্মৃতিচারণার পাশাপাশি এ-কথাও বার বার আন্দোলিত হয়েছে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায়।
আরও পড়ুন
সুদূর গ্রিস থেকে বারাণসীতে, অনুবাদ করেছেন একের পর এক বই
অন্যদিকে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশিত হয় চিন্তক, অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের প্রথম বাংলা বই। গ্রন্থটি উদ্বোধন করেন সমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। চিন্তকের পাশাপাশি ব্যক্তি গায়ত্রী চক্রবর্তীর সঙ্গেও যেন পরিচয় ঘটায় তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতা। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে হাজির ছিলেন স্বয়ং গায়ত্রীও। তাঁর বক্তব্যের মধ্যেও বার বার উঠে আসছিল পুরনো কলকাতার সেপিয়া-চিত্র। প্রেসিডেন্সি কলেজ, বালিগঞ্জের অলি-গলি, দ্বিতল বাসের স্মৃতিচারণা। তাঁর শিকড় যে ছড়িয়ে রয়েছে এই শহরের বুকেই— তা উঠে আসছিল তাঁর স্মৃতিচারণার ছত্রে ছত্রে। তাত্ত্বিকতা, সাবঅলটার্ন তথা নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চা এবং বিনির্মাণবাদের পাশাপাশি তাঁর গ্রন্থে জায়গা পেয়েছে কৈশোরের লেখা বেশ কিছু প্রবন্ধ। যার প্রেক্ষাপট এই কলকাতাই। তাছাড়াও ভারত কিংবা বাংলাদেশে তাঁর দীর্ঘদিনের সামাজিক ও মানবিক লড়াই-এর খণ্ডচিত্রও ফুটে ওঠে সমগ্র আলোচনাজুড়ে।
আরও পড়ুন
একের পর এক বই হাতে লিখে পুঁথির স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে ফরিদপুরের কিশোর
সংশ্লিষ্ট দুটি গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যেরই সম্পদ— তাতে সন্দেহ নেই কোনো। সেইসঙ্গে এই সান্ধ্য আলোচনাও যেন ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে রইল বাংলার সাহিত্যমহলে…
আরও পড়ুন
৪১ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিয়েছেন কেরালার ‘জীবন্ত লাইব্রেরি’
Powered by Froala Editor