গত রবিবার থেকে উত্তর কলকাতার টালা ব্রিজে বন্ধ হয়েছে বাস ও ভারী যানবাহন চলাচল। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে বিপর্যস্ত কমবেশি সকলেই। নতুন বাসরুটে যাত্রীদের যেমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তেমনই বিকল্প রাস্তায় বাড়ছে জ্যামও। কিন্তু যে-কারণে এই ব্রিজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তাও যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত।
১৯৬২ সালে তৈরি করা হয়েছিল এই টালা ব্রিজ। ব্যারাকপুর-ডানলপ-দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে শ্যামবাজারের সঙ্গে যোগসূত্র হিসেবে বিটি রোডের ওপর অবস্থিত টালা ব্রিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে এর বহনক্ষমতা। পাশাপাশি, বেড়েছে গাড়ি চলাচলও। ৫৭ বছর পেরিয়ে, জরাজীর্ণ দশায় পৌঁছেছে এই ব্রিজ। কোথাও দেখা দিয়েছে ফাটল, কোথাও আবার খসে পড়েছে চাঙড়। এই পরিস্থিতিতে, এর শীঘ্র সংস্কার না করা গেলে, যে-কোনো দিন বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সাধারণত যে-কোনো কংক্রিটের কাঠামোই নির্মাণের ২৫-৩০ বছর পর সংস্কার করাতে হয়। সেখানে ৫৭ বছর কেটে গেলেও কোনো সংস্কারই হয়নি এই ব্রিজের। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর বহনক্ষমতা বর্তমানে শূন্যে এসে ঠেকেছে। এতদিন যে ভেঙে পড়েনি, সেটাই আশ্চর্য।
অন্যদিকে, বাস ও ভারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, সোম-মঙ্গলবার দেখা গেছে তীব্র যানজট। বিকল্প রাস্তাগুলি পুজোর সময় ভিড়ের চাপ কতটা সামাল দিতে পারবে, তা নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ – সকলেই। এমনকি, পুজোর শেষ পর্যন্ত বাস চলাচল আবার চালু করা যায় কিনা, এই চিন্তাও ঘুরছে প্রশাসনের মাথায়।
তবে আর যাই হোক, সংস্কারের জন্য কখনও না কখনও দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ রাখতেই হবে এই ব্রিজ। তখন বিকল্প পথে যান চলাচল কতটা মসৃণ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। যে-প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উসকে দিয়েছে গত দু-দিনের ভোগান্তি।
প্রসঙ্গত, শতাব্দীপ্রাচীন টালা ট্যাঙ্কের সংস্কারও চলছে দীর্ঘদিন ধরে। আশা করা যায়, ২০২০ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে এর সংস্কারকার্য। যদিও একেকটি কম্পার্টমেন্ট বন্ধ করে সংস্কারের কাজ চালানোয়, সাধারণ মানুষকে খুব বেশি জলকষ্টে পড়তে হয়নি। কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের টালা ব্রিজের বেহাল দশা উভয় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এর সম্পূর্ণ সমাধান কবে হবে, তারই প্রতীক্ষায় নিত্যযাত্রীরা।