পরনে সুইমিং ট্রাঙ্ক। চেয়ার ছেড়ে উঠে ধীর গতিতে ডাইভিং বোর্ডের দিকে এগিয়ে চলেছেন এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। টলমল পায়েই সিঁড়ি বেয়ে ডাইভিং স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। তারপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়েই ঝাঁপ দিলেন জলে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁকে জল থেকে তুলে আনলেন সহকারীরা।
ক্লিফ ডেভরিস (Cliff Devries)। আজ থেকে আড়াই দশক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রতিভাবান সুইমারের (Swimmer) তালিকায় শীর্ষেই ছিল তাঁর নাম। সিনিয়র হাই স্কুলই হোক কিংবা রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতা— সবেতেই নজরকাড়া ফর্ম মেলে ধরেছিলেন ডেভরিস। স্বপ্ন ছিল একদিন গিয়ে দাঁড়াবেন অলিম্পিকের স্ট্যান্ডেও। আর সেই স্বপ্নটাকেই তাড়া করে ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর অনুশীলনের পথে হাঁটছিলেন ক্লিফ। তারপর যেন এক লহমাতেই বদলে গেল সবকিছু।
সেটা নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিক। অনুশীলন করতে গিয়েই ক্লিফ টের পেয়েছিলেন, ধীরে ধীরে কমছে কাঁধের জোর। প্রাথমিকভাবে ক্লিফ ভেবেছিলেন নার্ভের যন্ত্রণা কিংবা চোট থেকেই এই ঘটনা। কিন্তু এমআরআই রিপোর্টে সেই ধারণা ভাঙে তাঁর। না, কোনো চোট নয়। বরং, তাঁর মেরুদণ্ডের মধ্যেই বেড়ে উঠেছে আস্ত একটি টিউমার। মৃত্যু একপ্রকার নিশ্চিত বলেই নিদান দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
তবুও লড়াই ছাড়েননি ক্লিফ। বরং, ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করান তিনি। তাতে ৯০ শতাংশ টিউমরের অপরেশন সফল হলেও, চিরকালের মতো শরীরে দানা বাঁধে পক্ষাঘাত। কেবলমাত্র ঘাড় এবং আঙুল ঘোরানোর সামর্থ্যটুকুই অবশিষ্ট ছিল ক্লিফের। ১৯৯৫ সালের সেই অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ কয়েক বছর বিছানায় শুয়েই দিন কেটেছে তাঁর। তবে আশাহত হননি তিনি। শুরু করেছিলেন থেরাপি।
আরও পড়ুন
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই ‘সব্যসাচী’, লকডাউনে স্বপ্নপূরণ যুবকের
হ্যাঁ, বছরের পর বছর ধরে থেরাপি আর মানসিক জোরেই শেষ পর্যন্ত নিজের পায়ের দাঁড়ান ক্লিফ। প্রথমে অবশ্য চলাফেরা করতে হত লাঠির সাহায্যেই। এখন ধীর গতিতে হলেও কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে সক্ষম ক্লিফ। আর নেশা? হ্যাঁ, এখনও সাঁতারকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে রয়েছেন তিনি। নিউ ইয়র্কের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এখন তরুণ সাঁতারুদের নতুন করে আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি। অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন তাঁদের। আর প্রতিদিনই একটু একটু করে চেষ্টা করে চলেছেন পুনরায় সাঁতারে ফেরার। ব্যর্থ হয়ে চলেছেন প্রতিবারেই। কিন্তু একদিন সফল যে তিনি হবেনই, তা একপ্রকার নিশ্চিত…
আরও পড়ুন
পোলিও-র প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে প্যারালিম্পিকে বসিরহাটের সাকিনা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই অসংখ্য মানুষকে দিনবদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আরমান