কলকাতার নস্টালজিয়া জিজ্ঞেস করলে কী কী জিনিস মাথায় আসে আমাদের? ট্রাম, রসগোল্লা, দুর্গাপূজা- এসব তো আছেই। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও একটি জিনিস। দোতলা বাস। বিভিন্ন সিনেমায়, গল্পে-উপন্যাসে কতবার ঘুরে ফিরে এসেছে এই যানটির কথা। প্রেম, কবিতা, বিরহ - বাঙালির একান্ত আপন এই যানটিকে আজ আর দেখা যায় না। তবে মন খারাপের প্রহর বোধহয় শেষ হল। পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন আবারও এই দোতলা বাসকে ফিরিয়ে আনতে চলেছে রাস্তায়। যা নিয়ে অপেক্ষায় গোটা শহর।
সালটা ১৯২০। সদ্য ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী পরিবর্তন হয়েছে। এইরকম সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঠিক করল, কলকাতায় দোতলা বাস চালানো হবে। এ আবার কি কথা! দোতলা বাড়ি না হয় হল, তাই বলে বাসও দোতলা! লোকে অবাকই হল শুনে। আরও অবাক হল ১৯২৬ সালে। এই সময়ই কলকাতার রাস্তায় প্রথম নামল দোতলা বাস। কালীঘাট থেকে শ্যামবাজার - এই ছিল রুট। আস্তে আস্তে কলকাতা জুড়ে শুরু হল এর পথচলা। প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে শহরবাসীও একে আপন করে নিয়েছে। অনেক বেশি যাত্রী বহন করতে পারবে এই বাস। ব্যস, তাতেই খুশি। একে একে ভারতের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ল এই বাস।
আরও পড়ুন
১৯২১ সালেই মেট্রো রেলের পরিকল্পনা কলকাতায়, গঙ্গার নিচ দিয়ে ছুটবে ট্রেন!
লন্ডনে গেলে আজও দেখা যাবে এই দোতলা বাস। চলে ঢাকার পথেও। কলকাতাতেও ছিল, এই সেদিন পর্যন্ত। কিন্তু ধীরে ধীরে কমছিল চলাচল। এর সূত্রপাত ১৯৯০ সাল থেকে। অন্যান্য বাসের থেকে আকারে বড় হওয়ার জন্য রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে নাকি প্রায়ই টক্কর হত। এছাড়াও, গতিও ছিল শ্লথ। এইসব কারণ দেখিয়ে, বন্ধ করে দেওয়া হল এটি। ২০০৫ সালে গড়িয়া থেকে হাওড়া অবধি চলে শেষ বাসটি। তারপর, ইতি হল এক নস্টালজিয়ার…
কিন্তু, সেটাই শেষ নয়। রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের উদ্যোগে আবারও ফিরতে চলেছে ডাবল-ডেকার বাস। আপাতত দুটি বাসকে নামানোর পরিকল্পনায় তাঁরা। তবে এই দোতলা বাসগুলোর ছাদ থাকবে না, একদম ওপেন রুফ। সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ রোড ট্রান্সপোর্টের ছাড়পত্র মেলা বাকি। সব ঠিক থাকলে, এই মার্চেই আবারও রাস্তায় নেমে পড়বে দোতলা বাস। অতএব, এখন শুধু অপেক্ষার প্রহর গোনার পালা…