‘এভরিথিং উই ট্রায়েড টু ডু ওয়াজ ওয়াইপড আউট বাই মাদার নেচার।’
সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য কথা শোনা গেল যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা প্রদেশের জল-ব্যবস্থাপনা দপ্তরের এক আধিকারিকের থেকে। কথা হচ্ছে কলোরাডো নদীকে (Colorado River) নিয়ে। জন ডেনভারের গান থেকে শুরু করে বহু ইংরাজি কবিতা— শিল্প-সাহিত্যে বার বার ফিরে এসেছে কলোরাডো নদীর প্রসঙ্গ। এবার মৃত্যুর মুখে এসে হাজির হয়েছে আমেরিকার এই ঐতিহ্যবাহী নদী। যা রীতিমতো ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের।
আসলে কলোরাডোর সঙ্গে শুধু নস্টালজিয়া কিংবা অনুভূতি জড়িয়ে নেয় মার্কিনিদের। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৪ কোটি মানুষ নির্ভরশীল এই নদীর ওপর। ব্যবহারিক জল থেকে শুরু করে নদীর জল পরিশোধন করে পানীয় জলের সরবরাহ, কল-কারখানায় এই জলের বাণিজ্যিক ব্যবহার— কলোরাডোকে ছাড়া অচল আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল। বিশেষ করে অ্যারিজোনা, নেভাডা, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো প্রদেশ, যেগুলি কলোরাডোর দক্ষিণ অববাহিকায় অবস্থিত। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, হঠাৎ কেন এমন শোচনীয় হয়ে উঠল এই নদীর অবস্থা? কলোরাডোকে সুস্থ করে তুলতেই বা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিল প্রশাসনিক দপ্তর?
দেখতে গেলে এখানেও দায়ী বিশ্বউষ্ণায়ন। গোটা দুনিয়াজুড়েই খরার প্রকোপ দেখা গিয়েছিল ২০২২-এর শুরু থেকেই। বিশেষত ইউরোপ এবং আমেরিকার শিকার হয়েছিল ভয়াবহ হিট ওয়েভ বা তাপপ্রবাহের। আর সেই কারণেই বছরের শুরু থেকেই ক্রমাগত জলতল কমতে শুরু করে কলোরাডো নদীর। যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি হ্রদের মধ্যে লেক মিড ও লেক পাওয়েল— এই দুটি হ্রদেই জল সরবরাহ করে কলোরাডো। এই হ্রদ থেকেই জল সংগ্রহ করে ব্যবহার করা হয় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে। তবে চলতি বছরে কলোরাডোর জল হ্রাস পেলেও, অব্যাহত ছিল জল সংগ্রহের প্রক্রিয়া। ফলে ধীরে ধীরে জলতল হ্রাস পায় দুটি হ্রদেরও।
গত মে মাসে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় প্রশাসন ও জল-ব্যবস্থাপনা দপ্তরের। চিঠি লিখে তা জানানো হয়েছিল উচ্চস্তরে। তবে পদক্ষেপ নিতে নিতেই দেরী হয়ে যায় অনেকটা। সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন প্রশাসন বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জল ব্যবহার কমানোর জন্য। পাশাপাশি খরা প্রতিরোধে চালু করে ৪ বিলিয়ন ডলারের বিশেষ প্রকল্প। কিন্তু ততদিনে স্থানীয় ব্যবহার করা হয়ে গেছে নদীর ৩০ শতাংশ জল। কলোরাডো তো বটেই, পাওয়েল ও মিড— দুই হ্রদেরই জলতল তলানিতে।
চলতি শীতে, স্বাভাবিকের থেকে ১৫০ শতাংশ বেশি তুষারপাত পেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে। তবে দুঃখের বিষয় রকি পর্বতের পূর্বদিকে তুষারপাত হয়নি সেভাবে। ফলে, আগামী গ্রীষ্ম কিংবা বসন্তে তুষারপাতে যে কলোরাডোর ভরে উঠবে ফের— তেমন আশা দেখছেন না আধিকারিকরা। সেইসঙ্গে কলোরাডোর কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছে এল নিনো। এল নিনোর প্রভাবে আগামী বছরেও জারি থাকবে অনাবৃষ্টির থাবা। সেইসঙ্গে উষ্ণ বাতাসের প্রভাবে কলোরাডোর অবশিষ্ট জলও দ্রুত শুকিয়ে যাবে, রয়েছে সেই আশঙ্কাও। সবমিলিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মার্কিন পরিবেশবিদরা…
Powered by Froala Editor