কলম্বিয়ার কর্মাকারেনা পৌরসভা। সেই পৌরসভার অফিস থেকেই বেরিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তবে হঠাৎ নীরবতা ভেঙে গেল রাস্তার। একবার নয়। পর পর বেশ কয়েকবার গুলি চলল রিভালভার থেকে। আর তারপর মুহূর্তের মধ্যেই বাইকে করে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল দুই দুষ্কৃতী। ততক্ষণ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন জাভিয়ার ফ্রান্সিসকো পারা কিউবিলোস। কলম্বিয়ার অন্যতম এক পরিবেশকর্মী। দোষ বলতে সেটাই। বন-নিধনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।
গত ৩ তারিখ এই হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী থাকল কলম্বিয়া। আহত অবস্থায় তাঁকে পুলিশকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেও, রাস্তাতেই থেমে যায় লড়াই। হাসপাতালে যাওয়ার আগেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ফ্রান্সিসকো। কলম্বিয়া সরকারের পরিবেশ বিভাগের মেটা ডিপার্টমেন্টেই দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন ফ্রান্সিসকো। কোরমাকারেনা অঞ্চলে সামগ্রিক বিকাশের সমন্বয়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন বর্তমানে। মনুষ্যসৃষ্টি দাবানল, অনৈতিক নির্মাণ এবং বন-নিধনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ফ্রান্সিসকো। সেইসঙ্গে ড্রাগ-পাচার চক্রেরও বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। অ্যানডিয়ান, অরিনোসিন এবং অ্যামাজোনিয়ানের জীববৈচিত্রপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য খেসারত দিতে হল তাঁকে শেষ পর্যন্ত।
তবে চলতি বছরে ফ্রান্সিসকোর এই ঘটনাই প্রথম নয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এল কোকুই জাতীয় উদ্যানের এক রক্ষাকর্মীও প্রাণ হারিয়েছিলেন এমনই সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে। ২০১৯ থেকে সব মিলিয়ে মারা গিয়েছেন প্রায় ৬৪ জন পরিবেশকর্মী। তবে নিশ্চিত নয় সংখ্যাটা। কারণ নিখোঁজের সংখ্যার হিসাব নেই কোনো। পাশাপাশি ফ্রান্সিসকোর বিভাগেরই আরও ২০ জন কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে দুষ্কৃতীরা।
ফ্রান্সিসকোর মৃত্যুর পরেই নড়েচড়ে বসেছে কলম্বিয়া প্রশাসন। হত্যাকারীদের হদিশ পেতে ৬ হাজার মার্কিন ডলারের পুরস্কারমূল্য ঘোষণা করেছেন কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তবে তারপরেও কাটছে না আতঙ্ক। অদৃশ্য মৃত্যুশমনের সঙ্গেই লড়াই করে যাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। একদিকে যেমন অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে কলম্বিয়ার অরণ্যাঞ্চলের ভাগ্য, তেমনই যেন নিশ্চয়তা নেই পরিবেশকর্মীদের জীবনেরও...
Powered by Froala Editor