অন্যান্য দিন এখানে শুধুই লোক আর লোক। মাঝে ডাবওয়ালা দাঁড়িয়ে থাকে ঠেলাগাড়ি নিয়ে। একটু গলা ঠান্ডা করে নেওয়া, কিংবা পকেটে একটু টাকা জমলে চলে যাওয়া প্যারামাউন্টে। সকাল গড়িয়ে রাত হয়; ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ের মাঝে মুখ লুকিয়ে রাস্তা পার হয় আনকোরা ছেলেটি। হাতে গত রাতের লেখা কিছু কবিতা। এভাবেই প্রতিটা দিন নতুন হয়ে ওঠে কলেজ স্ট্রিট। লকডাউনে কেমন আছে বইপাড়া, একটু খোঁজ নেব না?
কলেজ স্ট্রিটের বিখ্যাত ক্রসিংয়ে এসে একটু থামল গাড়িটা। অন্যান্য দিন ট্রামের সারি, বাস-ট্যাক্সির ভিড় আর গলদঘর্ম ট্রাফিক পুলিশের মাঝেই জমজমাট থাকত এই জায়গাটা। আজ কেমন যেন শূন্য। সকালের রোদও হালকা ছোঁয়া ফেলেছে এখানে। যেন এই শূন্যতায় কারোর কষ্ট না হয়। একজন দুজন লোক বেরিয়েছেন; কেউ হাঁটতে, কেউ বা জিনিসপত্র নিয়ে বাজারের দিকে। একপাশে পড়ে আছে একরাশ ডাব। শুকনো মুখে খদ্দেরের প্রতীক্ষায় সবাই; অভ্যাসের দাস যে আমরা…
কফি হাউজ থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না এখন। প্রেসিডেন্সি আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও কোনো স্পর্শ পায়নি এই ৫৪ দিন। শুধু পশ্চিমবঙ্গে তো আরও আগে থেকে লকডাউন ঘোষিত হয়েছিল। সমস্ত দোকান বন্ধ; বইয়ের স্তূপ, নতুন পাতার গন্ধ সব থেমে গেছে। ব্যস্ত চেহারাটা সরিয়ে একটু আরাম করে নিচ্ছে সাধের বইপাড়া। প্রকাশনী সংস্থাগুলিতেও ভিড় জমাচ্ছে না উৎসাহী তরুণরা। নতুন কবিতার স্পর্শ পাচ্ছে না কলেজ স্কোয়ার। কফি হাউজের টেবিলে কেউ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ রাখছে না। একটু বিশ্রাম নিলেও, কলেজ স্ট্রিটের আজ বড্ড মন খারাপ। কবে যে সবাই আসবে আবার…
ভিডিও সৌজন্যে— সুধন্য সরকার