যিশুখ্রিস্টের জন্মের পর ততদিনে খ্রিস্টান ধর্ম দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তবে জেরুজালেম তখনও ইহুদিদেরই পবিত্র স্থান বলে বিবেচ্য। এই মাটিতেই আব্রাহাম তাঁর পুত্র ইসহাককে উৎসর্গ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুসারে, জেরুজালেম ছিল 'প্রমিসড ল্যান্ড'। সেই মাটি যখন অন্য কেউ অধিকার করতে চায়, তখন তো বিরোধ লাগবেই।
বিরোধ অবশ্য খ্রিস্টানদের সঙ্গে নয়, কারণ তারাও তো আব্রাহামেরই বংশধর। বিরোধ বেঁধেছিল বিধর্মী রোমানদের সঙ্গে। যে অপরাজেয় সাম্রাজ্যের কাছে ততদিনে নতিস্বীকার করে নিয়েছে সমগ্র ইউরোপ। সময়টা খ্রিস্টিয় দ্বিতীয় শতক। কিন্তু ইহুদিদের কাছে তো এই লড়াই ধর্ম রক্ষার লড়াই। বলা ভালো, এক ধর্মীয় বিদ্রোহ। যে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিমন বেন-কসিবা ওরফে বর-কোখবা। তাঁর নাম অনুসারেই এই বিদ্রোহের নাম বর-কোখবা বিদ্রোহ।
বর-কোখবা বিদ্রোহ ইউরোপের ইতিহাসে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তবে তার প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা খুব বেশি পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা হল কিছু প্রাচীন মুদ্রা। তার পরিমাণও খুব বেশি নয়। জেরুজালেম থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২০০০এর বেশি মুদ্রার মধ্যে মাত্র চারটি এই সময় থেকে প্রাপ্ত। তবে চতুর্থ মুদ্রাটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে খুব সম্প্রতি। লকডাউনের মধ্যেই ইসরায়েল প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছে। সেইসঙ্গে জানিয়েছে এই মুদ্রার কিছু একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথাও। যে বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি বাকি তিনটি মুদ্রার থেকে আলাদা। ইসরায়েলের স্বাধীনতার কথা আছে চারটি মুদ্রাতেই। কিন্তু এটিতে সঙ্গে আছে জেরুজালেমের উল্লেখ। লড়াই তো শুধু রোমানদের হাত থেকে ইসরায়েলের রাজনৈতিক স্বাধীনতার নয়, লড়াই ছিল পেগানদের হাত থেকে পবিত্র 'প্রমিসড ল্যান্ড'কে রক্ষা করার। আর সেই উল্লেখ কেবলমাত্র একটি মুদ্রাতেই মিলেছে! দেখে স্বাভাবিকভাবেই অবাক বিশেষজ্ঞরা।
প্রায় সমগ্র ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে একখণ্ড অবশিষ্ট জেরুজালেম। দোর্দণ্ডপ্রতাপ সম্রাটের এই লাঞ্ছনা কি সহ্য হয়? লাঞ্ছনা দূর করতে বদ্ধপরিকর সম্রাট হ্যাড্রিয়ান। জেরুজালেম তিনি শুধু দখলই করলেন না, ঠিক করলেন রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করা হবে সেই শহরকেই। এমনকি শহরের নাম পরিবর্তন করে রোমান দেবতা জুপিটারের নামে রাখারও সিদ্ধান্ত নিলেন। এর ফলে জব্দ করা যাবে ইহুদি এবং খ্রিস্টানদেরও। আর এই সিদ্ধান্তই প্রতিটা ইহুদির অন্তরে আঘাত করেছিল। রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্ন লুকিয়ে ছিল সেই চেতনার মধ্যেই।
আরও পড়ুন
ভারতের প্রথম ডাকঘর মেদিনীপুরের খেজুরিতে, সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকছে সেই ইতিহাস
মুদ্রায় জেরুজালেমের উল্লেখ সেই চেতনার কথাই মনে পড়িয়ে দেয়। তাই এই নতুন মুদ্রাটি যে ইউরোপের ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ বলে বিবেচ্য হতে চলেছে, সেবিষয়ে আশাবাদী ইসরায়েল প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গবেষকরা। এখন সাধারণ মানুষ শুধু অপেক্ষায় আছে, কবে কোনো মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে স্থান পাবে এই মুদ্রা। মানুষ চোখের সামনে দেখতে পাবে ১৯০০ বছরের পুরনো এক জ্বলন্ত ইতিহাসকে।
আরও পড়ুন
ভারতের প্রথম আদিবাসী উপাধ্যক্ষা সোনাঝারিয়া মিনজ্, ইতিহাসের সাক্ষী ঝাড়খণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি পেল প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভ্যালিডিক্টোরিয়ান-কে, তৈরি হল ইতিহাস