মানুষ ও চিতাবাঘের সহাবস্থান সম্ভব, ভরসা যোগাচ্ছে পরিবেশ সংস্থা

বাড়ির পাশে আগাছার মধ্যে থেকে হঠাৎ উঁকি দিল একটা চিতাবাঘ। এতে আর আশ্চর্যের কী আছে? এমনটা তো হয়েই থাকে। হ্যাঁ, আজ থেকে ৫০ বছর আগেও ভারতের সমস্ত অঞ্চলেই চিতাবাঘ ছিল অতি পরিচিত একটি প্রাণী। তাকে তেমন ভয় পেত না মানুষ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যটা বদলেছে। এখন চিতাবাঘের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশে এসে ঠেকলেও তাদের আক্রমণে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। সংরক্ষণকর্মীরা অবশ্য বলছেন, তাদের বাসস্থান বিপন্ন বলেই বারবার মানুষের এলাকায় ঢুকে পড়ছে চিতাবাঘ। তাই চিতাবাঘদের বাঁচিয়ে রাখাই নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায়। কিন্তু মানুষ আক্রান্ত হলেও তো প্রতিরোধ করবেই। তাই এবার পুরো সমস্যাটাকে একটা অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে চাইছে পরিবেশ সংস্থা তিতলি ট্রাস্ট। যেখানে মানুষকে রক্ষা করাই হবে প্রথম কর্তব্য।

তিতলি ট্রাস্টের কর্ণধার সঞ্জয় সোঁধি মনে করেন, চিতাবাঘের বাসস্থান বিপন্ন বলেই তারা মানুষের এলাকায় ঢুকে পড়ছে, একথা সম্পূর্ণ সত্য। কিন্তু এভাবে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ চোরাশিকারীদের দমন করা সম্ভব, কিন্তু যাঁরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে চিতাবাঘ মেরে ফেলেন তাঁদের আটকানো যাবে কীকরে? পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ২০২০ সালেই মহারাষ্ট্রে ৩৫ জন চিতাবাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন। উত্তরাখণ্ডে সংখ্যাটা ২০২০ সালের অক্টোবর মাসেই ছিল ২৪। এবং উত্তরোত্তর এই ধরণের আক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকছে। মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি গবাদি পশু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা তো রয়েছেই। আসলে চিতাবাঘের সংখ্যা কমে এলেও আজও আফ্রিকা মহাদেশের পরেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চিতাবাঘ রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশে। আর এদের বাস গ্রামাঞ্চলকে ঘিরেই। মানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অতি প্রাচীন। এবং তা একেবারে বিরোধমূলক নয়।

গতবছর ভারতের ওয়াইল্ডলাইফ কনসারভেশন সোসাইটির গবেষক ডঃ বিদ্যা অত্রেয়র গবেষণায় উঠে আসে সেইসমস্ত মিলিত যাপনের কথা। তিনি দেখান, আজও দেশের উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্তত ১০০টি গ্রাম আছে, যেখানে চিতাবাঘ সহজে কাউকে আক্রমণ করে না। আর তার কারণ, সেখানে মানুষ জানেন কীভাবে চিতাবাঘকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সময়ের নিয়মে এবং আধুনিকতার ফলে হারিয়ে যাওয়া সেই শিক্ষাকেই নতুন করে ফিরিয়ে আনতে চাইছে তিতলি ট্রাস্ট। এর জন্য উত্তরাখন্ডের বনবিভাগের সঙ্গে মিলিতভাবে শুরু হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও। চিতাবাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে। যেমন বাড়ির আশেপাশে আগাছা পরিষ্কার করা, রাতে গবাদি পশুদের ঘেরা জায়গায় রাখা বা উঠোনে সবসময় আলো জ্বেলে রাখার নির্দেশও দেওয়া হচ্ছে গ্রামবাসীদের। আর সেইসঙ্গে অবশ্যই, চিতাবাঘ দেখলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিজেরা ধরতে না গিয়ে বনবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশও দিচ্ছেন তাঁরা। তবে একান্তই যদি গ্রামবাসীদের নিজেদেরই চিতাবাঘ ধরতে হয়, তাহলে কীভাবে তাদের নিরাপদে জঙ্গলে পৌঁছে দেওয়া যাবে, সেই প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন।

আসলে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বা বন্যপ্রাণ ও মানুষের দ্বন্দ্বের কথা উঠলেই সবসময় আলোচনার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় বন্যপ্রাণীরাই। আর সংরক্ষণকর্মীদের এই মানসিকতার কারণেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে অনেক সময়। কিন্তু আলোচনার অক্ষটা একটু ঘুরিয়ে দিলেই সমাধানের রাস্তা পাওয়া যায় অতি সহজে।

আরও পড়ুন
চলতি বছরে ৭টি মানুষখেকো চিতা শিকার রুদ্রপ্রয়াগে, ফিরছে করবেটের স্মৃতি?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শিকারি হয়েও ব্যাঘ্র-সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল! জীবদ্দশাতেই বিতর্কে জিম করবেট