নিলামে উঠছে বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বই, বয়স হাজার বছর

বয়সের ভারে হলুদ হয়ে গেছে পার্চমেন্ট পৃষ্ঠা। আবছা হয়ে গেছে হিব্রু ভাষায় লেখা অক্ষরমালা। ফাটল ধরেছে পাতার ধার ঘেঁষে। তবুও যত্নের সঙ্গেই চামড়ার মোড়কে কোনোভাবে ধরা রয়েছে তাদের।

‘কোডেক্স সাসুন’ (Codex Sassoon)। ৮ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি আয়তনের এই গ্রন্থের বয়স প্রায় হাজার বছর। বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সম্পূর্ণ হিব্রু বাইবেল হিসাবেই ধরে নেওয়া হয় এই গ্রন্থকে। এবার আরও একটি তকমা জুড়তে চলেছে প্রাচীন এই ধর্মগ্রন্থের নামের সঙ্গে। বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গ্রন্থ (Most Expensive Book) হয়ে উঠতে চলেছে ‘কোডেক্স সাসুন’। 

মাস খানেক আগের কথা। মার্কিন ফাইন আর্টস কোম্পানি ‘সোথবি’স’ ঘোষণা করেছিল নিলাম উঠবে এই প্রাচীন গ্রন্থ। আগামী মে মাসে ‘সোথবি’স’-এর নিউইয়র্কের দপ্তরেই আয়োজিত হবে এই নিলাম। সংশ্লিষ্ট সংস্থার সম্প্রতি বিবৃতি অনুযায়ী, এই বই-এর দাম ধার্য করা হয়েছে ৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। অবশ্য নিলাম চলাকালীন এই দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেই মনে করছেন সংগ্রাহকরা। আর তেমনটা হলে ‘রথসচাইল্ড প্রেয়ারবুক’-কে টপকে বিশ্বের সর্বকালীন মূল্যবান গ্রন্থ হয়ে উঠবে এই বাইবেল। কিন্তু এই গ্রন্থের বিশেষত্ব কী? 

প্রথমত হিব্রু বাইবেল তিনটি আব্রাহামিক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই রচিত। যার মধ্যে রয়েছে ইসলাম, খ্রিস্টান এবং জুডাইক ধর্মবিশ্বাস। এই গ্রন্থের বয়স ১০০০ বছর। অর্থাৎ কার্বন ডেটিং অনুযায়ী, তা লেখা হয়েছিল আনুমানিক দশম শতকের শেষে বা একাদশ শতকের শুরুর দিকে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এর আগেও হিব্রু ভাষায় রচিত হয়েছিল একাধিক বাইবেল। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়েই মধ্যপ্রাচ্যের যাযাবর মানুষরা এমনই কিছু প্রাচীন পুঁথি খুঁজে পেয়েছিলেন মৃতসাগরের নিকটবর্তী একটি গুহা থেকে। তবে সেগুলি কোনোটাই সম্পূর্ণ বাইবেলকে উপস্থাপিত করে না। কোথাও লিখিত রয়েছে শুধুমাত্র নিউ টেস্টামেন্ট, কোথাও আবার ওল্ড টেস্টামেন্ট বা বাইবেলের বিভিন্ন পার্শ্ব-উপকথা। তবে ‘কোডেক্স সাসুন’-এ দুই মলাটে গোটা বাইবেলকে বন্দি করেছিলেন এই গ্রন্থের লেখক, থুড়ি লিপিকার। 

যদিও এই গ্রন্থকে ‘সম্পূর্ণ’ বাইবেল বলা চলে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছেই। কারণ, এই গ্রন্থের শেষের দিকের বেশ কয়েকটি পাতা হারিয়ে গেছে সময়ের আবহে। তা সত্ত্বেও, হিব্রু বাইবেলের সবচেয়ে সম্পূর্ণতম পাণ্ডুলিপি এটিই। আর সেই কারণে এই গ্রন্থের ঐতিহাসিক ও ধার্মিক গুরুত্ব কম নয় মোটেই। 

সোথবি’স-এর বিবৃতি অনুযায়ী, উনিশ শতকের কিংবদন্তি জুডাইকা সংগ্রাহক ডেভিড সাসুন তৎকালীন মধ্যপ্রাচ্য থেকে সংগ্রহ করেছিলেন এই গ্রন্থটি। তাঁর নামানুসারেই এই প্রাচীন অনুলিপির নাম রাখা হয় ‘কোডেক্স সাসুন’। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহেই দীর্ঘদিন ছিল এই গ্রন্থ। পরবর্তীতে তা হাত ঘুরে পৌঁছায় ‘সোথবি’স’-এর কাছে। দীর্ঘ পরীক্ষানিরীক্ষার পর নিশ্চিত করা হয়েছিল এই গ্রন্থের বয়স। তবে গ্রন্থের লিপিকারের নাম জানা যায়নি আজও। গত বছরই এই প্রাচীন ও ঐতিহাসিক গ্রন্থটির জন্য বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল সংশ্লিষ্ট মার্কিন ফাইন আর্টস সংস্থাটি। জনসমক্ষে এই গ্রন্থ প্রদর্শিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে ‘কোডেক্স সাসুন’-এর প্রদর্শনী। সেখান থেকেই এই গ্রন্থ সোজা নিউইয়র্কের নিলামঘরে পৌঁছাবে বলেই জানাচ্ছে ‘সোথবি’স’ কর্তৃপক্ষ। শেষ অবধি কত টাকা বিক্রি হবে এই বই— অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বের মানুষ… 

Powered by Froala Editor