১৮৫৫ সালের কথা। ব্রিটিশ গবেষক আলেকজান্ডার পার্কস গবেষণাগারে একটি বিশেষ যৌগ তৈরি করে। ‘পার্কসাইন’-খ্যাত সেই পদার্থ একদিকে যেমন টেকসই তেমন অন্যদিকে সাশ্রয়ীও বটে। পরের বছর পেটেন্টের সময়ই সেই পদার্থের নাম বদলে রাখা হয় প্লাস্টিক। পরবর্তী দেড়শো বছরে পরিবেশের নিঃশব্দ ঘাতক হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই পদার্থ। কিন্তু শুধুই কী দূষক? সাম্প্রতিক গবেষণায় এবার উঠে এল সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। উপকূল অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীদের ‘কৃত্রিম আশ্রয়কেন্দ্র’-এ পরিণত হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য (Plastic Waste)।
এমনটাই জানাচ্ছে, বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র। ভাসমান প্লাস্টিক বর্জ্যই হয়ে উঠেছে উপকূলবর্তী অঞ্চলের প্রাণীদের ‘পরিবহন ব্যবস্থা’। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রথম এই ধরনের ঘটনা লক্ষ করা গিয়েছিল ২০১১ সালে জাপানে সুনামির সময়ে। বিধ্বংসী সুনামির পর, উপকূলে বসবাসকারী প্রায় ৩০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিক আবর্জনায় ভাসতে ভাসতে পৌঁছেছিল উত্তর আমেরিকায়। যাদের এশিয়া ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো মহাদেশেই দেখা মেলে না। এমনকি তার মধ্যে বেশ কিছু প্রজাতির অস্তিত্ব সুনামিতে সম্পূর্ণভাবে মুছে যাবে বলেই অনুমান করেছিলেন গবেষকরা। সেই ঘটনাই উপকূলীয় সামুদ্রিক প্রজাতিদের সম্পর্কে গবেষকদের সমস্ত প্রচলিত ধারণা ভেঙে দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে গবেষকদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে এই ধরণের আরও বেশ কিছু উদাহরণ। গবেষকদের অনুমান উপকূলীয় পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে অভিযোজন করতেই প্লাস্টিক বর্জ্যকে ব্যবহার করছে এই প্রজাতিগুলি। যার মধ্যে রয়েছে বার্নাকল, কিছু বিশেষ প্রজাতির চিংড়ি, ব্রিটল স্টার ইত্যাদি প্রাণী। গবেষকরা এই প্রজাতিগুলির নামকরণ করেছেন ‘নিওপেলাজিক স্পিসিস’ হিসাবে।
আরও পড়ুন
সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক সরাবে পৃথিবীর ‘অষ্টম’ মহাদেশ
এর আগে গবেষণায় ধরা পড়েছিল, ক্রমশ প্লাস্টিক বর্জ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র। প্লাস্টিকের সংস্পর্শে থাকতে থাকতে অভিযোজন করছে বিভিন্ন অণুজীব। এবার প্লাস্টিক-সংক্রান্ত আরও একটি চমকপ্রদ পর্যবেক্ষণ সামনে এল গবেষকদের। তবে এত কিছুর পরও অস্বীকার করার জায়গা নেই, প্রতিবছর প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে মৃত্যু হয়ে চলেছে লক্ষ লক্ষ সামুদ্রিক প্রজাতির। সেই ক্ষতি অপূরণীয়ই…
আরও পড়ুন
প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে তৈরি জুতো, দিশা দেখাচ্ছে ভারতীয় স্টার্ট আপ
Powered by Froala Editor