কয়লার যোগান নেই, তবু অচিরাচরিত শক্তিতে অনাগ্রহী কেন্দ্র!

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী আরকে সিং রীতিমতো দুশ্চিন্তার কথাই শোনালেন। এখনও পর্যন্ত সারা দেশেই বিদ্যুৎ পরিষেবা মোটামুটি নির্বিঘ্নে চললেও আগামী কয়েক মাস পরিস্থিতি কঠিন হতে চলেছে। ইতিমধ্যে দেশের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে কয়লার সঞ্চয় (Coal Accumulation) শেষের মুখে। নতুন করে কয়লার যোগানেও টান পড়েছে। অবশ্য আগামী ৬ মাস বিদ্যুৎ পরিষেবায় সমস্যা হতে পারে, এটুকু ছাড়া কিছুই জানাননি মন্ত্রী। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে, বা আদৌ কতদিনে স্বাভাবিক হবে, জানেন না কেউই।

আজ থেকে দেশের ১৬টি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ। কারণ আর একদিন চালানোর মতোও কয়লার যোগান নেই কেন্দ্রগুলিতে। এখানেই শেষ নয়, আরও ৪৫টি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি। কারণ সেখানেও তিনদিনের বেশি কয়লার সঞ্চয় নেই। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই পরিস্থিতির সামনে পড়তে হল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে? সরকারি পরিসংখ্যানগুলি থেকেই উঠে আসছে সেই কারণ। ২০২০ সালে অতিমারীর কারণে বন্ধ ছিল বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাই বিদ্যুতের চাহিদাও রীতিমতো কমেছিল। কিন্তু ২০২১ সালে আবার চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় যোগান বাড়ানোর কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি। এদিকে ২০২১ সালে এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসে বিদ্যুতের চাহিদা ২০১৯ সালের হিসাবকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালে এই সময়ে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০৬ বিলিয়ন ইউনিট। ২০২১ সালে সেই সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছে ১২৪ বিলিয়ন ইউনিটে। শুধু তাই নয়, বেড়েছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতাও। ২০১৯ সালে দেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ৬১.৯ শতাংশ এসেছিল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। ২০২১ সালে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৬৪.৬ শতাংশ। ফলে কয়লার সংকট একেবারেই অপ্রত্যাশিত নয়। আর পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৭০ শতাংশ কেন্দ্রেই আগামী ৮ দিনের মধ্যে সব সঞ্চয় শেষ হতে চলেছে।

তবে কাঁচামালের যোগান ঠিক থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত ঠিকই। কিন্তু বিগত ২ মাস ধরে দেশের মূল কয়লা উৎপাদক অঞ্চলগুলিতেই প্রবল পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়ে গিয়েছে। ফলে শুকনো জ্বালানি কয়লার যোগান নেই। পরিবহণেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। খনির আশেপাশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে যদি বা কিছুটা সঞ্চয় রয়েছে, বাকি খনি থেকে দূরবর্তী কেন্দ্রগুলিতে একেবারেই নেই। আর সেখানেই সংকট সবচেয়ে বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদদের একাংশ এই ঘটনাকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছিলেন। কারণ কয়লার সংকট দেখা দিলেই অচিরাচরিত শক্তি উৎস থেকে উৎপাদনের বিষয়ে সচেতন হবে সরকার। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্রের তরফ থেকে তেমন উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। বরং বিদ্যুৎ ও রেল মন্ত্রালয়ের সঙ্গে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা সংস্থাগুলির সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয়েছে বিশেষ কমিটি। উদ্দেশ্য দুটি। একদিকে এখনও অবধি সক্রিয় কেন্দ্রগুলিতে উৎপাদন বাড়াতে চায় কেন্দ্র। যাতে নিজস্ব অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বাইরে পাঠানো যায়। অন্যদিকে কীভাবে দ্রুত কয়লার যোগান বাড়ানো যায়, তাই নিয়েই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা কতদিন কার্যকর হবে, তাই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

Powered by Froala Editor