‘লোমশ’ আর ‘গণ্ডার’— এই দুটো কথা একসঙ্গে কল্পনায় আনাটাই বেশ শক্ত কাজ। আর যদি গণ্ডারের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় পশমকে, তবে সুকুমারের লেখা হাঁসজারুর মতোই লাগবে। কিন্তু আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে এমনই অদ্ভুত প্রাণী বিচরণ করত পৃথিবীর বুকে। সাইবেরিয়ার এই মেরু-গণ্ডার বিলুপ্ত হয়ে যায় পৃথিবী থেকে ২০ হাজার বছর আগে। কিন্তু কী কারণ ছিল এই অবলুপ্তির। রহস্যোন্মোচন করলেন বিজ্ঞানীরা।
উত্তরপূর্ব সাইবেরিয়ার আর্কটিক তুন্দ্রা থেকেই বিজ্ঞানীরা সংগ্রহ করেছিলেন মেরুগণ্ডারের ১৪টি নমুনা। তার জিন-গত বিশ্লেষণেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এত হাজার বছর আগে এই প্রজাতির মৃত্যুর পিছনে দায়ী ছিল আবহাওয়া পরিবর্তন!
স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালেওজেনটিক বিশেষজ্ঞ এডানা লর্ড যুক্ত ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। এডানার মূল কাজই ছিল ১৪টি নমুনার মাইটোকন্ডিয়াল ডিএনএ-র বিশ্লেষণ। তার মাধ্যমেই মেরু-গণ্ডারের একটি ফ্যামিলি-ট্রি প্রস্তুত করেন তিনি। সেই ফ্যামিলি-ট্রিই জানাচ্ছে, মানুষ বা অন্য কোনো খাদকের তাণ্ডবে মুছে যায়নি মেরু-গণ্ডারদের অস্তিত্ব। কারণ তেমন হলে এই প্রজাতির বেশ কিছু জিন-বৈচিত্রের উপস্থিতি অনিয়মিত হয়ে পড়ত পরবর্তী নমুনাগুলোয়। তবে হচ্ছে না তেমনটা। অবলুপ্তির আগে পর্যন্ত বিভিন্ন জিনগুলির মধ্যে সংখ্যার অনুপাত প্রায় একই ছিল বলে জানাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে সাইবেরিয়ার এই অঞ্চলে মানুষ জায়গা নেওয়ার অনেক আগেই হারিয়ে গেছে এই প্রাণীর অস্তিত্ব। এডানার খুঁজে পাওয়া নমুনাগুলির মধ্যে সবথেকে প্রাচীনটির বয়স প্রায় ৫০ হাজার বছর এবং নবতর নমুনার বয়স ১৮৫০০ বছর। শেষ নমুনার পরেও আরও ৪৫০০ বছর বেঁচে ছিল মেরু-গণ্ডাররা, এমনটাই ধারণা তাঁর।
আরও পড়ুন
দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অত্যাচারের শিকার, বিলুপ্তির মুখে জায়ান্ট আইবিস
জিনের বৈচিত্র থেকেই আবহাওয়া পরিবর্তনের ইঙ্গিত পান তিনি। হলুদ পশমের এই মেরু-গণ্ডাররা মূলত ছিল শীতল-অভিযোজিত। কাজেই উষ্ণ-আদ্র জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি আদিম এই প্রজাতি। তবে জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল এই প্রজাতি। জিনে মোট ৮৯টি পরিবর্তন ধরা পড়েছিল বিশ্লেষণে। কিন্তু তারপরেও শেষরক্ষা সম্ভব হয়নি বলেই জানাচ্ছেন গবেষক এডানা। সেইসঙ্গে তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই গণ্ডারের উত্তরসূরীই হল সুমাত্রান গণ্ডার। মানুষের পাশাপাশি তাদের ক্ষেত্রেও একটা বড়ো শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পরিবর্তনশীল আবহাওয়াই...
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে বাংলার গেঁড়ি-গুগলি, আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্সির দুই গবেষক
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির মুখ থেকে ফিরে এল ধূসর নেকড়ে, খুশি বিশেষজ্ঞরা