গত মার্চ মাসের ঘটনা। বেঙ্গালুরু ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এবং গুয়াহাটি আইআইটির গবেষণা জানিয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) জেরে দেশজুড়ে ৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে ধানের উৎপাদন। কাজ হারাবেন হাজার হাজার মানুষ। সেই সম্ভাবনা যেন প্রকট হচ্ছে ক্রমশ। এবার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের রিপোর্টেও প্রতিফলিত হল এই ঘটনা।
আন্তর্জাতিক সংস্থাটির সমীক্ষা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন (Migrated) ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের অসংখ্য মানুষ। যার মধ্যে অন্যতম ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া জেলা এবং ঝাড়খণ্ডের পালামৌ জেলার গ্রামগুলি। সবমিলিয়ে ১৪টিরও বেশি গ্রাম প্রায়-জনশূন্য হয়ে পড়েছে বলেই দাবি আন্তর্জাতিক সংস্থাটির।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এইধরনের সমীক্ষা হয় কেবলমাত্র তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন গবেষকরা। নিয়েছিলেন সাক্ষাৎকারও। ফলে, বাস্তব ঘটনা যে রিপোর্টে উঠে আসা ছবির থেকে ভিন্ন নয়, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তবে কেবলমাত্র ওড়িশা কিংবা ঝাড়খণ্ডই জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার, এমনটা নয়। বরং, গোটা বিশ্বেই ক্রমশ থাবা বসাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। ফলে প্রশ্ন থেকে যায়, হঠাৎ করেই কি এক ধাক্কায় বদলে গেল ভারতের এই দুই রাজ্যের পরিস্থিতি?
সংশ্লিষ্ট সমীক্ষা অনুযায়ী, বন্যা, খরা এবং ঘূর্ণিঝড়— মূলত এই তিন ঘটনাই ত্বরান্বিত করছে গণ-অভিবাসনকে। বিগত কয়েক বছরে বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে চরম আবহাওয়ার জন্য, এই সকল অঞ্চলগুলিই খরার শিকার হয়েছে। সেক্ষেত্রেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে ১৭২ শতাংশ। ঝাড়খণ্ডের ছবি অনেকটা এমনই। অন্যদিকে ওড়িশায় এই খরা ও বন্যার সঙ্গে জোট বেঁধেছে ঘূর্ণিঝড়। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই দাবি গবেষকদের।
বন্যা, খরা কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সমস্যা আগে ছিল না, এমনটা নয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ৬০ শতাংশের অভিমত, প্রাকৃতিক চরমতা এই তারতম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। ফলে, মধ্যেবর্তী সময়ে ‘ক্ষত’ সারিয়ে তোলাই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাঁদের পক্ষে। ব্যাহত হচ্ছে জীবিকাও। পুকুরে কিংবা চাষের জমিতে নোনা জল প্রবেশ করায় মৎস্যচাষ কিংবা কৃষিকাজ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। তাই বাধ্য হয়েই গ্রাম ছাড়ছেন স্থানীয়রা। সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ, বীমা ও অন্যান্য ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও এই ক্ষতির নিরিখে সে-সকল অপ্রতুলই বটে।
তবে শুধু ঝাড়খণ্ড বা ওড়িশা নয়, আগামীদিনে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, ছত্তিশগড়, অরুণাচল, মিজোরামে মত রাজ্যও। বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতে অনিয়মিত তুষারপাত আগামীতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। এখন দেখার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আদৌ কতটা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে দেশের পরিবেশ মন্ত্রক…
Powered by Froala Editor