জলবায়ু পরিবর্তনে চেহারা পাল্টাচ্ছে পাখিদেরও!

ক্রমশ বেড়ে চলেছে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা। দ্রুত গতিতে গলছে মরুবরফ। শুধু মানুষই নয়, জলবায়ুর এই ক্রমপরিবর্তনে হুমকির মুখে গোটা জীবজগৎ। এমনকি এই পরিবর্তনের জন্য একাধিক প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ষষ্ঠ গণ-অবলুপ্তিকেই ত্বরান্বিত করছে, এই তথ্য উঠে এসেছিল একাধিক গবেষণায়। এবার গবেষকদের সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাল আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার কারণে, ক্রমশ দেহের আকার পরিবর্তিত হচ্ছে বেশ কিছু উষ্ণ রক্তের প্রাণীর। 

মূলত পাখিদের শারীরিক গঠন নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়েই বেশ কিছু প্রজাতির আকারের এই পরিবর্তন নজরে আসে অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। তারপরেই নড়েচড়ে বসেন তাঁরা। খুঁজে বাড় করা হয়, সংশ্লিষ্ট প্রজাতিগুলির সম্পর্কে রেকর্ড করে পূর্ববর্তী নথি। আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ক্রমশ আকার বদলাচ্ছে প্রাণীরা। বিষয়টি নিশ্চিত হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫২টি প্রজাতির প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি পাখির তথ্য সংগ্রহ করেন বিজ্ঞানীরা। সেই তথ্যের বিশ্লেষণও সম্মতি জানায় প্রাথমিক ধারণাকে। 

কিন্তু, প্রশ্ন থেকে যায়, এই বিবর্তন যে জলবায়ুর কারণেই, তা কীভাবে নিশ্চিতভাবে বলছেন গবেষকরা? উত্তর দিতে গবেষকরা ফিরে যাচ্ছেন ডারউনের তত্ত্বে। সেই তত্ত্বে বহু আগেই উল্লেখিত হয়েছিল, দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য, মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে যেকোনো প্রাণী তার দেহতল বৃদ্ধি করে। বহু বছর আগে ডারউনের দেওয়া সেই তত্ত্বের সঙ্গেই যেন হুবহু মিলে যাচ্ছে সাম্প্রতিক পর্যালোচনা। শরীরের মূল গঠন একই থাকলেও, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে। উদাহরণ হিসাবে গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক সারা রাইডিং জানাচ্ছেন, ১৮৭১ সাল থেকে ২০২০— এই দেড়শো বছরে অস্ট্রেলিয়ান তোতার চোখের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ থেকে ১০ শতাংশ। একই ঘটনা লক্ষ করা গেছে পাখিদের ঠোঁট, পালকের ক্ষেত্রেও। শুধু পাখিই নয়, বাদুড়-সহ একাধিক স্তন্যপায়ীর দেহেও মিলেছে এই পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রমাণ। বেড়েছে কান, নখ, লেজের দৈর্ঘ্য। 

বিবর্তন বা অভিযোজন নতুন কোনো বিষয় নয়। তা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা। তবে প্রাণীদের এই দ্রুত বিবর্তনই ভাবিয়ে তুলেছে গবেষকদের। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এই আকস্মিক পরিবর্তনকে আশঙ্কার চোখেই দেখছেন তাঁরা। বিবর্তনের ফলে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিলেও, তার জন্য বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা যেতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রজাতিগুলির মধ্যে। সম্প্রতি ‘ট্রেন্ডস ইন ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। আর তা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। এর মাস কয়েক আগে মানুষের ক্ষেত্রেও এই ধরনের বেশ কিছু দ্রুত বিবর্তনের প্রমাণ পেয়েছিলেন গবেষকরা। সেই ঘটনার সঙ্গেও জলবায়ু পরিবর্তনের আদৌ কোনো মিল আছে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্নও। তবে উত্তর পাওয়ার জন্য আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা…

আরও পড়ুন
ভারতের নিজস্ব ‘জুরাসিক পার্ক’, দাপিয়ে বেড়াত ১৩টি প্রজাতির ডাইনোসর!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পরিযায়ী পাখিদের নতুন অভয়ারণ্য দিনাজপুরে