২০১৭ সাল। ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সভায় প্রথমবারের জন্য মিটজি জোনেল ট্যানকে দেখেছিলেন জন বনিফাসিও। সেখান থেকেই তাঁদের আলাপ, ঘনিষ্ঠতা, প্রেম। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, মিটজির সৌন্দর্য্য কিংবা হাস্যরস মুগ্ধ করেনি জনকে। বরং, তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল পরিবেশ বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) প্রতি মিটজির সক্রিয়তা, তাঁর বক্তৃতা। হ্যাঁ, এই তরুণ-তরুণীই বিশ্বখ্যাত ফ্রাইডেস ফর ফিউচার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে। সম্প্রতি তাঁদের বিচ্ছেদ হলেও, ২৪ বছর বয়সি এই দম্পতি এখনও একইসঙ্গে গলা ফাটান পরিবেশের জন্য।
শুধু জন কিংবা মিটজিই নন। সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু সংকটই প্রেম (Love), ভালোবাসা, বিচ্ছেদের (Separation) কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অসংখ্য মানুষের জীবনে। অন্তত তেমনটাই বলছে পরিসংখ্যান। ২০১৯ সালে ডেটিং সাইট ‘ওকে-কিউপিড’-এ ব্যবহারকারীদের প্রোফাইলে জলবায়ু পরিবর্তনের উল্লেখ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় আড়াইগুণ। টিন্ডারেরও দেখা গেছে একই প্রবণতা। পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কে সচেতন জীবনসঙ্গীর খোঁজ করছে মানুষ, এমনটাই দাবি তাঁদের।
অন্যদিকে একটি ভিন্ন গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ম্যাথিউ গোল্ডবার্গ। তাঁর গবেষণায় উঠে আসছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দিক। একদিকে যেমন জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সচেতনতা জীবনসঙ্গীর কাছে এনে দিচ্ছে বহু মানুষকে, তেমনই অনেকক্ষেত্রে মানুষের বিচ্ছেদেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ক্লিনিক্যাল থেরাপিস্ট অ্যান্ড্রু ব্রায়ান্টের কথায়, পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, অনেক সময়ই মূল্যবোধ ও দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে মানুষকে। আর সেই থেকেই বিচ্ছেদের সম্মুখীন হচ্ছেন বহু দম্পতি। বিষয়টা ঠিক কেমন?
ধরা যাক, মনে মনে আপনি পরিকল্পনা করে রেখেছেন সামনের গ্রীষ্মের ছুটিতে বাইকে চেপে লাদাখে ঘুরে আসবেন। এমন সময় যদি পরিবেশ দূষণের অজুহাত দেখিয়ে আপনার এই স্বপ্নে বাধা দেয় আপনার স্ত্রী? কিংবা পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসে বদল আনতে বাধ্য করেন তিনি? হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সাম্প্রতিক সময়ে এরকমই সমস্যা নিয়ে ক্লিনিকাল থেরাপিস্টদের কাছে হাজির হচ্ছেন বহু মানুষ। তাছাড়া পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সন্তানগ্রহণে আগ্রহী নন অনেকেই। তাঁদের স্পষ্ট অভিমত, দূষণে মোড়া এই পৃথিবীতে একটা নতুন প্রাণ সৃষ্টি মানে তাকে জন্মলগ্ন থেকেই ঠেলে দেওয়া নরকে। এই মনোভাবও পরোক্ষভাবে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ইন্ধন যোগাচ্ছে।
তবে এসবের বাইরে গিয়ে দেখতে গেলে আধুনিক জেড-প্রজন্মের মধ্যে যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। পরিবেশের ক্ষতি রুখতে রাষ্ট্র সেভাবে উদ্যোগ না নিলেও, অসংখ্য মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে বদল আনার জন্য প্রস্তুত, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। যা যথেষ্ট আশাজনক বলেই মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা…
Powered by Froala Editor